বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘রাত ২টার পর ওষুধ লাগলে কোথায় যাব?’

  •    
  • ২৪ আগস্ট, ২০২২ ১৮:১৩

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইমার্জেন্সি রোগের ক্ষেত্রে কোনো মানুষই বলতে পারেন যে, রাত ২টার পরে আর ওষুধ লাগবে না। আমি নিজেও এ রকম বিপদে পড়তে পারি, তখন যাব কোথায়? আমি কি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ১ সেপ্টেম্বর থেকে মধ্যরাতের ওষুধের দোকান বন্ধ রাখতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নির্দেশনা অনুযায়ী, অলি-গলির সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টার পর বন্ধ হয়ে যাবে। আর হাসপাতাল সঙ্গে সংযুক্ত ওষুধের দোকান বন্ধ হবে রাত ২টার পর।

এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে, অতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ওষুধের দোকান রাতের একটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকতে পারে কোন যুক্তিতে? বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কিত। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবচনার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

তারা বলছেন, অলি-গলির ওষুধের দোকান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করলেও, হাসপাতালের আশপাশের ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা প্রয়োজন। হাসপাতালে যেকোনো সময়েই জটিল ও গুরুতর রোগী আসতে পারেন। তা ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্যও সার্বক্ষণিক ওষুধের জোগান নিশ্চিত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফার্মেসি সবসময়ই ইমার্জেন্সি সেবার সঙ্গে যুক্ত। তাই হাসপাতালের সামনে সব ওষুধের দোকান খোলা রাখা উচিত। এগুলো বন্ধ রাখলে মানুষ যাবে কোথায়? এটা অবশ্যই সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সি রোগের ক্ষেত্রে কোনো মানুষই বলতে পারেন যে, রাত ২টার পরে আর ওষুধ লাগবে না। আমি নিজেও এ রকম বিপদে পড়তে পারি, তখন যাব কোথায়? আমি কি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?

‘তাই যারা এই অর্ডারটা দিয়েছেন তাদের আবার বসা উচিত এবং সিদ্ধান্তটি রিভিউ করা উচিত। অন্তত হাসপাতালের সামনের সব ফার্মেসি খোলা রাখা উচিত।’

আরও পড়ুন: ওষুধের দোকান বন্ধে ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন চেয়ে নোটিশ

ডা. এবিএম আব্দুল্লার সঙ্গে একমত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু কিছু ফার্মেসি আইডেন্টিফাই করে সেগুলো খোলা রাখা উচিত। ফার্মেসি খোলা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যখন-তখন মানুষের এটার প্রয়োজন পড়ে।‘

ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি প্রথমে নীতিনির্ধারকদের বসে আইডেন্টিফাই করতে হবে কোন ফার্মেসি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোন ফার্মেসিতে ২৪ ঘণ্টাই মানুষ আসা-যাওয়া করে। এগুলো শনাক্ত করে সারা রাত খোলা রাখা উচিত। কম গুরুত্বপূর্ণ ফার্মেসি কিছু সময় বন্ধ রাখলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘সব ফার্মেসি গভীর রাতে বন্ধ করে দিলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ঘটে যেতে পারে। কারণ মানুষে জীবন তো আর ওই সময়ের মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না।’

আরও পড়ুন: রাত ২টার পর ওষুধের দোকানের দরকার নেই: তাপস

অন্যদিকে শুধু হাসপাতাল সংলগ্ন নয়, সব ফার্মেসিই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা উচিত বলে মনে করছেন হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আলিমুজ্জামান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত থেকে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই সরে আসা উচিত। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থাকবে আর জরুরি রোগী আসবে না তা তো হতে পারে না। ফার্মেসি খোলা না থাকলে শুধু রোগী নয়, ডাক্তাররাও বিপদে পড়ে যাবেন। রাত ২টার পর ডাক্তারা কী দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা দেবেন!’

তিনি বলেন, ‘অলি-গলির ফার্মেসির ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত নয়। কেউ খোলা রাখলে বাধা দেয়া ঠিক হবে না। পাড়া-মহল্লায় রাত-বিরাতে অনেক মানুষ জরুরি সমস্যায় পড়েন। তখন আশেপাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সমস্যার সমাধান করা হয়।

‘আমি মনে করি এ সিদ্ধান্ত থেকে সিটি করপোরেশনের সরে আসা উচিত। এই সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হতে পারেন।’

অবশ্য দক্ষিণ ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দাবি করছেন, সিটি করপোরেশন কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওষুধের দোকানের যে সময় নির্ধারণ হয়েছে, তা যথেষ্ট।

রাজধানীর শাহবাগে বুধবার এক অনুষ্ঠানে মেয়র তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরের শৃঙ্খলা আনতে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। সেখানে ওষুধের দোকানগুলোকে আমরা সর্বোচ্চ সময় দিয়েছি।

‘অলিগলির ওষুধের দোকানগুলোকে আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি আর হাসপাতালে পাশের ফার্মেসিগুলোকে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, এটা যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর