বিভিন্ন প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ও সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে তাদের উদ্দেশে বছরের বিশেষ দিন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বাঘ দিবস, হাতি দিবসের কথা তো আমরা সবাই জানি, এমনকি বিড়ালের জন্যও রয়েছে বছরের বিশেষ দিন।
সেদিক থেকে মশারা বেশ দুর্ভাগা। ক্ষুদ্র এই পতঙ্গের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত রয়েছে বছরে, তবে সেটি মোটেই মশা সুরক্ষার জন্য নয়; এরা যেসব রোগ ছড়ায় তা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোই এই বিশেষ দিবসের উদ্দেশ্য।
দেখতে বেশ ক্ষুদ্র হলেও হরহামেশাই ঘাতকের রূপ নিতে পারে মশা। মশাবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য।
চলতি বছরে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ২২৮ জন।
বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করতে ১৯৩০ সাল থেকে ‘বিশ্ব মশা দিবস’ পালিত হচ্ছে। আজ ২০ আগস্ট সেই মশা দিবস।
১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট চিকিৎসক রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ‘নোবেল’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
আর আবিষ্কারের দিনটি পরিচিতি পায় ‘মশা দিবস’ হিসেবে। ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রসকে সম্মান জানাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি পালনের সূচনা করে ১৯৩০ সালে।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ১৪ প্রজাতির মশা।
মশাবাহিত রোগ
বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী মশাবাহিত রোগের অন্যতম হলো ম্যালেরিয়া। অ্যানোফিলিস মশার সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। ম্যালেরিয়া নির্মূলে নানা উদ্যোগ আর চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নের কারণে এই রোগে মৃত্যু আগের তুলনায় কমেছে।
তবে এখনও মশাবাহিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে ।
বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর অন্যতম হলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: সবচেয়ে সুন্দর মশা
গবেষণা বলছে, গত ৩০ বছরে ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগ। সংক্রমণ হার ৩০ গুণ বেড়েছে।
১৯৬৪ সালে প্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়। শুরুতে রোগটি ‘ঢাকা ফিভার’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু হিসেবে শনাক্ত হয় রোগটি।
এরপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। এ রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
মশা নিয়ন্ত্রণে নেয়া পদক্ষেপ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল-বিকেল মশা নিধনে কাজ করে যাচ্ছি। একদিকে ওষুধ যেমন দিচ্ছি, অন্যদিকে নালা-ডোবাও পরিষ্কার করে যাচ্ছি। আমাদের কাজে গতিও বাড়িয়ে দিয়েছি, এ বছর তার ফলও পাচ্ছি।’
গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার মশা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত বছরও এই আগস্ট মাসে আমাদের ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় আট হাজার। আর এ বছর আগস্টের ১৯ তারিখ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। এই মাস শেষে হয়তো আরও এক হাজার রোগী বাড়তে পারে। এতেই বোঝা, যায় আমরা এডিস মশা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে ছামসুল কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কর্মতৎপরতা আছে। আমরা সকালে লার্ভিসাইড, বিকেলে ফগিং কার্যক্রম করি। এই মশা নিধনের জন্য দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ৫০ জন কর্মী নিয়োজিত আছে। আমাদের পর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণের উপকরণও আছে, কোনো কিছুর ঘাটতি নেই।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নগর ভবনে কন্ট্রোল রুম খোলার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কন্ট্রোল রুম আমাদের মেয়র তদারক করেন। এটার মাধ্যমে আমরা আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ড মনিটর করছি। আর এ কারণেই গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঢাকায় মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক কম।’
জনগণও অনেক সচেতন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত বছরও আমরা এক কোটি টাকার ওপরে জরিমানা করেছিলাম, এবার অনেক কম জরিমানা করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাদবাগান। এখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সব ছাদে যাওয়া আমাদের কর্মীদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাসার মালিকদের সহযোগিতা পেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেক এগিয়ে যাব।’