বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা বাড়লেও মাস্কে অনীহা

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২২ ২০:২৭

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ‘সংক্রমণের হার এখনও ১৫ শতাংশের নিচে। এটি ২০ শতাংশের বেশি হলে অবশ্যই বিধিনিষেধ দেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার। অথচ করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেই আগ্রহ। অনেকের ধারণা, করোনার টিকা নেয়ার ফলে মাস্ক পরার দরকার নেই। বেশিরভাগ মানুষের এ নিয়ে রয়েছে উদাসীনতাও। একই সঙ্গে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় কমেছে মাস্কের বিক্রি।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, মগবাজার ঘুরে মানুষের মাস্ক না পরার এমন প্রবণতার চিত্র দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারে দেখা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইসতিয়াক মিয়ার সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। আর অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘টিকা তো নিয়েছি, তাই মাস্ক পরা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যাথা নেই।’

একই অবস্থা দেখা গেল হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আব্দুল মালেকের বেলায়ও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবসময়ই মাস্ক পরি। আজ বেড়াতে আসছি তো তাই মাস্ক পরা হয়নি। আর আমি তো তিন ডোজ টিকাও নিয়েছি। তাই মাস্ক পরা নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না।’

মাস্ক পরা নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত রয়েছে মগবাজারের বাসিন্দা আরমান শেখের। তার দাবি, মাস্ক পরলেও করোনা ঠেকানো যাবে না।

তিনি বলেন, ‘মরণ যখন আসবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। মাস্ক পরলেই কী করোনা ঠেকানো যাবে? মাস্ক পরে কী হবে? কিছুই হবে না। কপালে যা আছে তাই হবে।’

এ দিকে মাস্ক নিয়ে মানুষের উদাসীনতার বিষয়টির প্রভাব পড়েছে মাস্ক বিক্রির দোকানগুলোতেও। সেখানে আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না।

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাস্ক বিক্রেতা সেন্টু বেগ বলেন, ‘যখন করোনা খুব বেড়েছিল তখন দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাস্ক বিক্রি করতাম, আর এখন তা ৩-৪ হাজারে নেমে এসেছে।’

একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মগবাজারের মা ফার্মেসির মালিক সবুজ। তিনি বলেন, ‘আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ ধারণা করছে, টিকা যেহেতু নেয়া হয়েছে তাই মাস্ক পরার দরকার নেই। আগে ৫০-৬০ বক্স মাস্ক বিক্রি করলেও এখন তা ১০-১৫ বক্সে নেমে এসেছে।’

বিশেজ্ঞরা যা বলছেন

রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা বাড়ছে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা চলে আসার জন্য। সারা দেশেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ ছাড়া জনসমাবেশ ও বিয়ের অনুষ্ঠান বেড়েছে। সেখানে তারা ফেস মাস্ক পরছে না, মানা হচ্ছে না সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব।’

প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও অনেক বেশি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘প্রতিদিন যে সংক্রমণের হার দেখছেন, প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও বেশি। একজনের শনাক্ত হলে, আরও পাঁচজন শনাক্তহীন হয়ে ঘুরে বেড়ায়।’

ড. আলমগীর বলেন, ‘আগের মতো সবাই মিলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আশা যায় খুব শিগগিরই সংক্রমণ কমে আসবে।’

করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির সদস্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর জন্য সরকার থেকে জোরালো নির্দেশনা থাকতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতাও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য ক্লিনিক্যাল অবস্থা মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। আইসিইউয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা গত বছরেও দেখেছি, এক হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এবার যেন সে পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিঠি দিয়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সারা দেশের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

করোনা সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে বাইরে যায়নি জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সংক্রমণের হার এখনও ১৫ শতাংশের নিচে। এটি ২০ শতাংশের বেশি হলে অবশ্যই বিধিনিষেধ দেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন এক হাজার ৬৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা চার মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এক হাজার ৯৫১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে এক দিন ছাড়া টানা ২৪ দিন নতুন করোনা রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন বুধবাব ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এনিয়ে টানা ৯ দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের উপরে থাকল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।

নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৫১১ জন ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ২১৩ জন।

এ বিভাগের আরো খবর