বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খারাপ স্বপ্নে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ১৯:২৮

২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পারকিনসনে নতুন শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা ‘আক্রমণাত্মক বা অ্যাকশন-প্যাকড’-এর মতো বিষয়গুলো বারবার স্বপ্নে দেখেন। যেসব রোগী এমন স্বপ্ন দেখেন, রোগ নির্ণয়ের এক বছরের মাথায় তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। এটা আসলে প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের পূর্বাভাস দিতে পারে পারকিনসনে আক্রান্তরা।

প্রতি রাতে যখন আমরা ঘুমাতে যাই, আমাদের মস্তিষ্ক তখন একটি ভার্চুয়াল জগতে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে। যেখানে আমরা একটি উদ্ঘাটিত গল্পের প্রধান নায়ক, যা সচেতনভাবে তৈরি করিনি; অন্য কথায়- আমরা স্বপ্ন দেখি।

বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে স্বপ্নগুলো আনন্দদায়ক, কখনও কখনও নেতিবাচক, প্রায়শই উদ্ভট, তবে খুব কমই ভয়ংকর। অর্থাৎ যদি তাদের আদৌ স্মরণ করা হয়। তবুও প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে স্মরণীয় এবং ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন (খারাপ স্বপ্ন যা আপনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে) সপ্তাহে এমনকি প্রতি রাতেও ঘটে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণের তুলনায় খারাপ স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন বেশি দেখেন। পারকিনসনে আক্রান্ত ১৭-৭৮ শতাংশ মানুষ সাপ্তাহিক দুঃস্বপ্ন দেখে থাকেন।

২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পারকিনসনে নতুন শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা ‘আক্রমণাত্মক বা অ্যাকশন-প্যাকড’-এর মতো বিষয়গুলো বারবার স্বপ্নে দেখেন। যেসব রোগী এমন স্বপ্ন দেখেন, রোগ নির্ণয়ের এক বছরের মাথায় তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। এটা আসলে প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের পূর্বাভাস দিতে পারে পারকিনসনে আক্রান্তরা।

এখন প্রশ্ন হলো, পারকিনসনে আক্রান্ত নন এমন মানুষের স্বপ্নও কি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে?

দ্য ল্যানসেটের ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, হ্যাঁ। তারাও পারে। বৃদ্ধ বয়সে ঘন ঘন খারাপ বা দুঃস্বপ্ন দেখা পারকিনসনে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক সতর্কতা ধরে নেয়া যেতে পারে।

গবেষকরা আমেরিকার একটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে। সেখানে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে স্বাধীনভাবে বাস করা ৩ হাজার ৮১৮ জন বয়স্ক পুরুষের তথ্য ছিল। তাদের যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল খারাপ স্বপ্ন নিয়ে।

যেসব অংশগ্রহণকারী সপ্তাহে অন্তত একবার খারাপ স্বপ্ন দেখেন, তাদের পারকিনসন রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা দেখতে গড়ে সাত বছর ধরে চলে পর্যবেক্ষণ। এ সময়ে ৯১ জনের পারকিনসন নির্ণয় করা হয়। গবেষণার শুরুতে যারা ঘন ঘন খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের পারকিনসন হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ ছিল।

আশ্চর্যজনকভাবে গবেষণার প্রথম পাঁচ বছরে নির্ণয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত ঘটে। এই সময়ের মধ্যে যারা ঘন ঘন খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের পারকিনসন রোগ হওয়ার আশঙ্কা তিন গুণেরও বেশি ছিল।

এই ফলাফলগুলো এটাই পরামর্শ দেয় যে বয়স্ক/প্রাপ্তবয়স্করা যাদের একদিন পারকিনসন রোগ নির্ণয় হবে, তারা রোগের বৈশিষ্ট্যযুক্ত লক্ষণগুলোর বিকাশের কয়েক বছর আগে খারাপ স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করতে পারেন। যার মধ্যে কাঁপুনি, কঠোরতা এবং নড়াচড়ার মন্থরতাও রয়েছে।

পারকিনসনের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে কাঁপুনি, দৃঢ়তা এবং নড়াচড়ার ধীরগতি। ছবি: সংগৃহীত

গবেষণাটি আরও দেখায় যে আমাদের স্বপ্নগুলো মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে পারে। নিউরোসায়েন্স গবেষণায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এই গবেষণায় ঘন ঘন খারাপ স্বপ্ন দেখা ৩৬৮ জন পুরুষের মধ্যে মাত্র ১৬ জন পারকিনসনে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু পারকিনসন তুলনামূলক বিরল রোগ, তাই বেশির ভাগ মানুষ যারা ঘন ঘন খারাপ স্বপ্ন দেখেন, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।

তবুও যাদের অত্যধিক দিনের ঘুম বা কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদের জন্য অনুসন্ধানটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আগে থেকে রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসায় তা নিয়ন্ত্রণে রাখার সম্ভাবনা বেশি।

পারকিনসনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বপ্ন পরিবর্তনের জৈবিক কারণগুলো দেখার জন্য ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করার একটি কৌশল) ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা।

এটি এমন একটি চিকিৎসাপদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগ শনাক্তের পাশাপাশি খারাপ স্বপ্নের চিকিৎসা করানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে এই অবস্থার বিকাশের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদেরও সারিয়ে উঠানো সম্ভব হবে।

এ বিভাগের আরো খবর