দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বন্যার মধ্যে টানা দুই দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি থাকা এবং প্রতিদিনই তা আগের হারকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যতগুলো নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার ৬ দশমিক ২৭ শতাংশে ভাইরাসটির উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এই হার গত ১১৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আগের দিন পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই হার ৫ শতাংশের নিচে নামার পর এই প্রথম তা এর বেশি হলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থেকে এর নিচে নেমে এলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। উল্টোপথে যাত্রা অর্থাৎ সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে থেকে ৫ ছাড়ালে পরবর্তী ঢেউ আঘাত হেনেছে ধরা হয়।
দু-এক দিনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। পরপর দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি বা কম থাকে, তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বা পরবর্তী ঢেউ আঘাত হেনেছে বলে ধরা হয়।
এ নিয়ে টানা দুই দিন সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি হলো, যা মাস দুয়েক আগেও ছিল ১ শতাংশের কম।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর করোনাসংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো একেবারেই পালিত হচ্ছে না। মাস্ক পরাসহ যেসব স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলে আসছে সরকার, সেগুলো উপেক্ষা করছে মানুষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৯০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩৩ জনের শনাক্ত হয়েছে করোনা। গত ৯৬ দিনে এটিই সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত ৮ মার্চ এর চেয়ে বেশি শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন ৪৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে টানা ১৭ দিন নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ল।
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত এক দিনে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এই হার ১১৬ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও কোনো মৃত্যু না থাকাটা স্বস্তির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। এতে করে মোট করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ১৩১ জনে রয়ে গেল।
অধিদপ্তর জানায়, নতুন রোগী শনাক্ত হওয়া ৪৩৩ জনের মধ্যে ৩৮৫ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এর বাইরে চট্টগ্রামে ২৬ জন, কক্সবাজারে ৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫ জন, কিশোরগঞ্জ ও যাশোরে ২ জন করে এবং গাজীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বগুড়ায় একজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৭১১ জন। প্রতি ১০০ জন শনাক্তের বিপরীতে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে।
প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। এই ধরন শনাক্ত গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আর তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিত হয় ২০ জানুয়ারি।
২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এদিকে আসাম-মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে হু হু করে। ইতোমধ্যে সিলেট-সুনমাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝিতে আরেক দফা বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষের।