বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকার গণপরিবহনে হয়রানির শিকার ৬৩ শতাংশ নারী

  •    
  • ৩ জুন, ২০২২ ২০:৪৪

জরিপের উদ্দেশ্য ছিল কিশোরী এবং তরুণীরা ঢাকার গণপরিবহনে কোন ধরনের হয়রানির শিকার হন এবং মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব তা খুঁজে বের করা।

ঢাকায় গণপরিবহনে চলাচল করতে গিয়ে অন্তত ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব হয়রানির মধ্যে রয়েছে যৌন হয়রানি, বডি শেমিং, আপত্তিকর স্পর্শ, লিঙ্গ বৈষম্য।

অবশ্য সবচেয়ে বেশি নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেন উঠে এসেছে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে।

শুক্রবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি: কিশোরী ও তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব’ শীর্ষক জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপে বলা হয়, ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী গণপরিবহনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, তাদেরকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বুলিং, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্য এবং ৮ দশমিক ২ শতাংশ বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছেন।

জরিপের উদ্দেশ্য ছিল কিশোরী এবং তরুণীরা ঢাকার গণপরিবহনে কোন ধরনের হয়রানির শিকার হন এবং মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব তা খুঁজে বের করা।

গবেষণায় ঢাকায় বহুল ব্যবহৃত গণপরিবহনগুলোকেই নমুনা হিসেবে বেছে নেয় জরিপকারীরা। এসব পরিবহনের মধ্যে বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন বাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল।

এ ছাড়া ডেটা সংগ্রহের জন্য অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতির সমন্বয় করা হয়েছে।

যেসব নারী অংশ নিয়েছেন জরিপে তারা ঢাকার আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। যাদের বয়স ১৩ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

৮০৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ১৯-২৪ বছর বয়সী তরুণী রয়েছেন ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ। বয়সভেদে কিশোরী বিবেচনায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী রয়েছেন ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এই জরিপে অংশ নেন।

জরিপটিতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মোট অংশ নেয়ার ৮৬ দশমিক ০৯ শতাংশই শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ০৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ কলেজ পড়ুয়া এবং ৪ দশমিক ২২ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মজীবী এবং ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ গৃহিণীও ছিলেন।

যৌন হয়রানি করায় এগিয়ে সাধারণ যাত্রীরা

যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের ৭৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদেরকে অন্যযাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বেশি। ২০ দশমিক ৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের হয়রানি করেছেন পরিবহনের সহকারী বা হেল্পাররা।

৩ শতাংশ হকারের মাধ্যমে এবং ১ দশমিক ৬ শতাংশ ড্রাইভারের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

গণপরিবহনকে অনিরাপদ করে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে জরিপে সাধারণ যাত্রীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

আপত্তিকর স্পর্শ

গণপরিবহনে কোন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সে বিষয়ে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, চলাচলের সময় তাদেরকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করা হয়েছে। ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানিয়েছেন, গণপরিবহনে যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও অন্য যাত্রীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ইচ্ছাকৃতভাবে হালকা স্পর্শ করে গেছেন ১৭ দশমিক ৯ শতাংশকে।

এ ছাড়া ১৪ দশমিক ২ শতাংশ ইচ্ছাকৃত ধাক্কার শিকার হয়েছেন। ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী জানিয়েছেন, তারা বাজে মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।

ভীড়ের মধ্যে যৌন হয়রানি বেশি হয়

পরিসংখ্যান বলছে, গণপরিবহনে হালকা ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কিশোরী ও তরুণীরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যা ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। অতিরিক্ত ভিড়ে যৌন হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২ শতাংশের ক্ষেত্রে।

বসে থাকা অবস্থায় যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছেন ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। গণপরিবহনে ওঠা বা নামার সময় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

ঝামেলা এড়াতে নিরব অনেকেই

যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে অহেতুক ঝামেলা মনে করায় তা এড়াতে পিছিয়ে গেছেন ১৪ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা। কিন্তু কীভাবে তার পাশে দাঁড়ানো যায়, তা না বুঝতে পারায় সহযোগিতা করতে পারেননি ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গণপরিবহনের অন্য যাত্রীদের সাহায্য করা উচিত বলে মনে করেছেন ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

গণপরিবহনের হয়রানি প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যেও

জরিপে দেখা গেছে, ২১ দশমিক ২ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী গণপরিবহন ব্যবহারের সময় যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে পরে ট্রমাটাইজড হয়েছেন।

২৯ দশমিক ৪ শতাংশের মনে গণপরিবহন এক ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ হীনমন্যতায় এবং ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ বিষণ্ণতায় ভুগেছেন বলে শেয়ার করেছেন।

গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপের মধ্যে যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই সামাজিক সমস্যাকে পুরোপুরি মোকাবিলা করতে হলে আমদের নৈতিকতাকে ঠিক করতে হবে।’

সুপারিশ, গণপরিবহনে সিট সংখ্যার বেশি যেন যাত্রী না তুলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে বাস স্টাফসহ যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা, প্রতিটি বাসে সিটের পাশে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক বিভিন্ন লিফলেট লাগাতে হবে, সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে বাসে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা জরুরিভিত্তিতে বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর