দেশের ৫৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায় বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এর অর্থ হলো ঝুঁকিমুক্ত পানি পাচ্ছে না ৪১ শতাংশ মানুষ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার ‘এডিপি বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্য: এসডিজি-৬ অর্জনে একটি বাধা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে ৩৯ শতাংশ ক্ষেত্রে।
‘২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বরাদ্দ’ শিরোনামে বাজেটপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াটার পোভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ইউনিসেফ এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা সঠিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্প নির্বাচনে মনোযোগী হওয়া এবং গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াশ বিষয়ে বরাদ্দের ব্যবধান কমানোর প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানান।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমডিজির (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পরবর্তী সময়ে এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) যুগে অবস্থান করছি। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার ধরনে কিছু মানগত পার্থক্য রয়েছে। এমডিজিতে শুধু পানি পাওয়ার লক্ষ্য ছিল। সরকারের হিসাবে আমরা ৫৯ শতাংশ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করেছি।
‘আর ৩৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এখানে নীতিসহায়তা এবং অর্থায়ন ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সেটি আরও বাড়াতে হবে।’
মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, এমডিজি সময়কালে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ নির্মূলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করে। জাতীয় অগ্রাধিকার সূচক অনুযায়ী, শতভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা সেবার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে ২০২১ সাল পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৩৯ শতাংশ। তার মধ্যে গ্রামে ৪২ শতাংশ এবং শহরে ৩৪ শতাংশ।
এতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশকে পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতার (হাইজিন) ক্ষেত্রে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিনের অন্যান্য মৌলিক নির্দেশকের অগ্রগতি মাত্র ৫৮ শতাংশ এবং ‘সাবান অথবা পানি ছাড়া’ নির্দেশকের জাতীয় অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিচের দিক থেকে দ্বিতীয়।”
ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় পিপিআরসির একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপির মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ১৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা ছিল ওয়াশ খাতে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ৭২ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কার্যকর এডিপি প্রকল্প নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা, অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানো ও আন্তঃশহর বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা এবং শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা।