বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাসপাতালে সেবা নেয়া কমায় বাড়ছে অন্তঃসত্ত্বার ঝুঁকি

  •    
  • ২৮ মে, ২০২২ ০৮:৪৩

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম নাসরীন বলেন, ‘করোনার সময়ে অনেক গর্ভবতী নারী আতঙ্ক বোধ করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের লকডাউনের ফলে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে যাননি। হাসপাতালগুলোতেও স্বাভাবিক সেবা পাওয়াটা ছিল দুষ্কর। ফলে বাড়িতেই সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অনেক মা মারা গেছেন; বহু নবজাতকেরও মৃত্যু হয়েছে।’

মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বিশেষ সেবা দিয়ে আসছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সাড়ে ৯ মাসে ৪ বার সেবা নিতে হয় গর্ভবতী নারীকে; তবে সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই সেবা নেয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।

এই কারণে মাতৃত্বকালীন জটিলতা বেড়েছে। সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় প্রথমবার সেবা নেয়ার হার কিছুটা আশা জাগালেও পরের তিনটিতে একেবারে কমে আসছে। ফলে গর্ভবতী মায়েরা সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় জটিলতা বাড়ছে।

অনেক অভিভাবক এ বিষয়ে সচেতন নন। শহরের তুলনায় সেবা নেয়ার প্রবণতা গ্রামে অনেক কম। এ কারণে প্রসব-পরবর্তী জটিলতাও বাড়ছে।

নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানোর পরামর্শও এসেছে। একই সঙ্গে প্রসূতি সেবা নেয়ার হার বাড়ানোর কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে এমনিতেই সেবা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃসেবায় জনবল ও অবকাঠামোগত নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০২০ সালে করোনাকালে সেবা আরও ব্যাহত হয়। চারবারের মধ্যে প্রথমবার সবচেয়ে বেশি প্রসূতি এই সেবার আওতায় এসেছে।

প্রথম দফায় সেবা নেন ৬৮ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা, কিন্তু চতুর্থ দফায় গিয়ে সেবা নেয়ার হার কমে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে। অর্থাৎ সেবার বাইরে ২০ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা। ২০২১ সালেও প্রথম দফায় সেবা নেয়ার হার কিছুটা বাড়লেও পরের তিন ধাপের অবস্থা আগের মতই।

এক-তৃতীয়াংশের বেশি নবজাতকের জন্ম অস্ত্রোপচারে

করোনার মধ্যে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব কিছুটা বাড়লেও এখনও প্রত্যাশার বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গত এক বছরে তিন লাখ ৮৪ হাজার ১৮৫টি প্রসব হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে, সংখ্যায় যা এক লাখ এক হাজার ২৫৯টি।

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯৭৭ জন মা। আর নবজাতক মারা গেছে ১৫ হাজার ১৮টি। গ্রামে এখনও অধিকাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে ৭০ শতাংশের বেশি মা ও শিশু। এই ঝুঁকি এড়াতে গর্ভবতীদের সেবা নেয়া অব্যাহত রাখার দাবি বিশেষজ্ঞদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম নাসরীন বলেন, ‘করোনার সময়ে অনেক গর্ভবতী নারী আতঙ্ক বোধ করেছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের লকডাউনের ফলে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে যাননি। হাসপাতালগুলোতেও স্বাভাবিক সেবা পাওয়াটা ছিল দুষ্কর। ফলে বাড়িতেই সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অনেক মা মারা গেছেন; বহু নবজাতকেরও মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিয়ে, ২০ বছরের নিচে সন্তান নেয়া। এ ছাড়া প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, বিলম্বিত প্রসব ও ঠিকমতো প্রসব করতে না পারায় ইনফেকশন। অন্যদিকে কম ওজন নিয়ে জন্ম, প্রি-ম্যাচিউর, জন্মের পর পর শ্বাস না নেয়া ও নাভিতে ইনফেকশনের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়।’

জনবল ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেবা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বাইরে দেশে স্বাভাবিক সময়েও এখনও ৫০ শতাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। এর বাইরে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে, ২৬ শতাংশ ক্লিনিকে এবং মা ও শিশু হাসপাতালে হয় ২ শতাংশ প্রসব।

প্রসূতি সেবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জনবল ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেবা। ফলে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে ৭০ শতাংশেরও বেশি মা ও শিশু। কারণ বাড়িতে প্রসব সেবাদানকারী হওয়া প্রায় ৯০ ভাগই অপ্রশিক্ষিত।

সন্তান গর্ভধারণের আগে থেকে প্রসবের সময় পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শের মধ্যে আসাকে প্রসবপূর্ব সেবা বা অ্যান্টিন্যাটাল কেয়ার (এএনসি) বলা হয়। এতে গর্ভের সন্তান চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকে। ফলে প্রসবের সময় কোনো ধরনের জটিলতা তৈরির শঙ্কা কম থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই সেবা আটবার নেয়ার পরামর্শ দিলেও বাংলাদেশে সেটি চারবার নেয়া হয়।

পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবাগুলো দেয়ার কথা, কিন্তু‍ অবকাঠামো ও জনবলের ঘাটতি থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সারা দেশে আমাদের পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফডব্লিউসি) পদ যেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার, সেখানে লোকবল আছে অর্ধেক।’

তিনি বলেন, ‘নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে হলে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটাকে ৭০ শতাংশে নিয়ে আসতে চাই, কিন্তু ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করা গেলেও বাকি অর্ধেক এখনও বাড়িতেই হচ্ছে।’

পরিবার পরিকল্পনার অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ সনাতন ও ৫২ শতাংশ আধুনিক পদ্ধতি মিলে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ দম্পতি এর আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে স্থায়ী আছে মাত্র ৯ শতাংশ, কিন্তু আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এটাকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা, কিন্তু জনবল না থাকায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছা কঠিন হচ্ছে।

‘১৯৭৪ সালে যখন জনসংখ্যা ৭ কোটি ছিল, তখন এই কাজের জন্য পরিবার কল্যাণ সহকারীর ২৩ হাজার ৫০০ পদ সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৭ কোটি হলেও সেই পদই রয়েছে, যা এখন ৪৭ হাজার হওয়ার কথা। আবার যে পদ আছে, সেখানে খালি সাড়ে ছয় হাজার। তাহলে কাজ করব কীভাবে?’

পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০১০ সালে প্রতি লাখ শিশুর জন্মে মাতৃমৃত্যু ছিল ১৯৪ জন। এক দশকে তা কমে ১৬৫ জনে নেমেছে, তবে গ্রামে এখনও এই হার ১৯১; শহরে ১২৩।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সরকারিতে এবং ৮৫ শতাংশই বেসরকারি হাসপাতালে হয়ে থাকে।

দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ঠিকঠাক জোরদার নেই। দুই-একটি ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের তেমন ইতিহাস পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে নানা ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বেসরকারিতে। সেখানে অস্ত্রোপচারের (সিজার) সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এ বিষয়ে অবসটেট্রিক্যাল গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গুলশান আরা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে সিজারিয়ান ডেলিভারি। এর কিছু উপকার থাকলেও এর ক্ষতির দিক অনেক বেশি। তাই এই ডেলিভারি কমিয়ে আনা জরুরি।’

এ বিভাগের আরো খবর