বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাতিল ওষুধ এখনও বাজারে

  •    
  • ২৭ মে, ২০২২ ১১:১১

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্দেশনার চার সপ্তাহ পরেও নিবন্ধন বাতিল হওয়া আট গ্রুপের সব ওষুধ বাজারে মিলছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ফার্মেসিগুলো বলছে, ঔষধ প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা তারা হাতে পায়নি।

মানুষ ও প্রাণীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত আট গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একই সঙ্গে এগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা নিতে ঔষধ শিল্প সমিতিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ নির্দেশনার চার সপ্তাহ পরেও নিবন্ধন বাতিল হওয়া আট গ্রুপের সব ওষুধ বাজারে মিলছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ফার্মেসিগুলো বলছে, ঔষধ প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা তারা হাতে পায়নি।

ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধগুলো নিবন্ধন বাতিলের কারণ প্রকাশ ও দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায় থেকে এসব ওষুধ সরবরাহ করে ল্যাবরেটরিতে মান যাচাই করা হয়। বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উৎপাদন অনুমোদন নেয়ার সময় শর্ত মানলেও বর্তমানে তা মানা হচ্ছে না। ফলে জনস্বার্থে আট পদের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।’

ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধগুলো নিবন্ধন বাতিলের কারণ প্রকাশ ও দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ফাইল ছবি

তবে এই ওষুধ এখনও কেন বাজারে মিলছে বা এতদিনেও কেন ওষুধ শিল্প সমিতির কাছে অফিস আদেশ পৌঁছাল না– তার কোনো জবাব তিনি দিতে পারেননি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০ এপ্রিল সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও সংশ্লিষ্ট নথি শাখা বরাবর ৯ মে পাঠানো হয়। এতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়: ‘সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে জানানো যাচ্ছে যে, ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির ২৫৩তম সভায় এই ওষুধসমূহের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায় এসব ওষুধসমূহ যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছিল, সে সব প্রতিষ্ঠানের এই পদের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। চিঠির অবগতি ও আদেশের অনুলিপি পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলো।’

যেসব ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে, সেগুলো হলো: গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত র‌্যাবিপ্রাজল গ্রুপ, ব্যথানাশক ব্রোমেলাইন ও ট্রিপসিন গ্রুপের অ্যাস্ট্রাজেন ২/৪ ও জেনথিন ২/৪ ক্যাপসুল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাস্ট্রাজ্যানথিন গ্রুপ।

এ ছাড়া পশুপাখির চিকিৎসায় ব্যবহৃত সেফট্রিয়াক্সোন (সোডিয়াম) (ভেট) ইনজেকশন ও সেফট্রিয়াক্সোন ০.২৫ জি ইউএসপি অথবা ভিয়াল; লিভোফ্লোক্সাসিন হেমিহাইড্রেট ১০.২৫ এমজি ইকুইভ্যালান্ট টু লিভোফ্লোক্সাসিন ১০ এমজি অথবা ১০০ সল্যুশন (১০ শতাংশ) ওরাল সল্যুশন। মহাবিপন্ন শকুন রক্ষার্থে ক্ষতিকর সকল ডোজের ভেটেরিনারি ওষুধ কিটোপ্রোফেন ও প্রাণিচিকিৎসায় কলিস্টিন জাতীয় ওষুধের সকল ডোজের ফরম বাতিল করা হয়েছে।

এমন নির্দেশনার বিষয়ে কিছুই জানে না ওষুধ শিল্প সমিতি।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাইলেই ঔষধ প্রশাসন কোনো ওষুধ বাতিল করতে পারে না। কারণ স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটি শুধু ওষুধের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তাছাড়া ওষুধ বহির্বিশ্বে রপ্তানি হওয়ায় মান নিয়ন্ত্রণের বিষয় জড়িত থাকে।

‘কোনো ওষুধের মান উন্নয়ন বা উৎপাদন বন্ধের প্রয়োজন হলে অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়। এরপর আমরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমরা এখনো পাইনি। পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

নির্দেশনার প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও কেন চিঠিটা পেলেন না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে সরেজমিন রাজধানী ও কয়েকটি জেলার ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে এসব ওষুধ এখনও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন এরিস্টো ফার্মার তৈরি র‌্যাবিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ রেব-২০ এমজি, ২০ পিসের একপাতা ওষুধ ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই গ্রুপের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ১০ পিসের এক পাতা রেবেকা ২০ এমজি ট্যাবলেট ৫০ টাকা, ইবনে সিনার ১০ পিসের একপাতা জোরাল ২০ এমজি ৩০ টাকা, একমির ১৪ পিসের একপাতা র‌্যাবিজল-২০ এমজি ৭০ টাকা, অপসোনিন ফার্মার ২০ পিসের একপাতা ফিনিক্স-২০ এমজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া বাতিলকৃত ব্রোমেলেইন ও ট্রিপসিন (জেনিরিক নাম) গ্রুপের তৈরি ১০ পিসের একপাতা কোনটাভ ট্যাবলেটও বিক্রি হচ্ছে বলে ফার্মেসিগুলো নিশ্চিত করেছে। তারা বলছে, ব্রোমেলেইন ৫০ এমজি+ টি ১ এমজি ট্যাবলেট ব্রোমেলেইন ইউএসপি ৫০ এমজি+ট্রিপসিন বিপি ১ এমজি ওষুধ পাকিস্তান থেকে দেশে আসে। ‘সিটি ওভারসিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এগুলো আমদানি করে থাকে।

এ ছাড়া জেনারেল ফার্মার তৈরি অ্যাস্টাজানথিন গ্রুপের ১০ পিসের একপাতা অ্যাস্ট্যাজেন-২/৪ এমজি ২২০ টাকা, স্কয়ারের জেনথিন ২/৪ এমজি দশ পিসের একপাতা ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফার্মাসিস্টরা আরও জানান যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কম, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এই সুপার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ওষুধটি সেবনের পরামর্শ দেন, বাজারে কাটতিও বেশ ভালো।

কাঁটাবনের মডেল ফার্মেসি ম্যাক্সমন ফার্মা লিমিটেডের ফার্মাসিস্ট নাসির উদ্দীন ও আমির হোসেন বলেন, ‘সাধারণত কোনো ওষুধ বাতিল হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, ঔষধ শিল্প সমিতি গণবিজ্ঞপ্তি বা চিঠি দিয়ে জানায়। চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করেন না, উৎপাদক কোম্পানি বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়। কিন্তু এসবের কিছুই আমরা পাইনি। তাই এসব আইটেম বিক্রি হচ্ছে।’

ধানমন্ডির নিলু ফার্মার ইনচার্জ কাওসার আহমেদ জানান, টেলিভিশনে ওষুধগুলোর নিবন্ধন বাতিলের খবর তিনি শুনেছেন। কিন্তু ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল ও কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি বা কোম্পানি থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরাও লিখছেন।

জিগাতলার ইসলাম ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা আব্দুল কাদির অভিযোগ করে বলেন, ‘এর আগে গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিন ওষুধ ছিল, বেশ ভালো চলত, কিন্তু হুট করে উঠিয়ে নিল। একই ওষুধ স্কয়ার কোম্পানি অন্য নামে বাজারে ছেড়েছে, তা বিক্রিও হচ্ছে।’

ধানমন্ডির লাজ ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা চন্দন কুমার বলেন, ‘র‌্যাবিপ্র্যাজল গ্রুপটি বাজারে ছাড়ার সময় কোম্পানিগুলো জানিয়েছিল খাদ্য গ্রহণের আগে-পরে দুইভাবে ওষুধটি সেবন করা যায়, কোনো ক্ষতি নাই। এখন সেটিও উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক কী তা জানানো হচ্ছে না। ক্ষতিকর উপাদান থাকলেও না জানার ফলে রোগীরা আগের মতোই সেবন করবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম বলেন, ‘কারও হাত-পা ভাঙলে সরাসরি দেখা যায়। তবে কোনো ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন না করলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে নাও প্রকাশ পেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হচ্ছে কি না তার জন্য গবেষণা দরকার। ফলে র‌্যাবিপ্রাজলসহ যেসব গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রচার-প্রচারণার দরকার।’

তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে তিনি বিজ্ঞপ্তি দেখেছেন। সেখানে নিবন্ধন বাতিলের কারণ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাখ্যা দিলে চিকিৎসকরদের বুঝতে সহজ হতো। বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকদের কাছেও এমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গ্যাস্ট্রিকের জন্য র‌্যাবিপ্রাজলের বিকল্প আরও অন্তত পাঁচটি গ্রুপের ওষুধ রয়েছে। এই ধরনের ওষুধ একই রকম কাজ করে। র‌্যাবিপ্রাজলসহ কয়েটি গ্রুপের ওষুধের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি স্পষ্ট করলেও মানুষ উপকৃত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর