বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাইপোলার ডিজঅর্ডার কতটা প্রভাব ফেলে যৌনতায়

  •    
  • ১৬ মে, ২০২২ ২০:২১

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ধরন ও এর লক্ষণের ধারাবাহিকতা, সময়কাল ও তীব্রতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। প্রায় ক্ষেত্রে এগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বেশির ভাগ ব্যক্তির মেজাজের পরিবর্তন কোনো ধারাবাহিক ছন্দ অনুসরণ করে না। যেমন, ম্যানিয়ার আগে তাদের বিষণ্নতার একাধিক পর্ব থাকতে পারে। প্রতিটি পর্বের সময়সীমাও আলাদা।

বাইপোলার ডিজঅর্ডার বিশেষ এক মানসিক সমস্যা। পূর্ণবয়স্ক মানুষের তিন শতাংশ এ সমস্যায় ভোগেন। যৌন জীবনের ওপরেও প্রভাব ফেলে বাইপোলার ডিজঅর্ডার।

এ ধরনের সমস্যার বেশ কয়েকটি দৃশ্যমান ধরন রয়েছে। তবে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হুট করে মেজাজ পরিবর্তন ও বিষণ্নতা বা উন্মত্ত আচরণ। বিষণ্নতার সময় ইচ্ছা থাকার পরেও অনেকে কামশক্তি, যৌনতার অনুপ্রেরণা ও উত্তেজিত হওয়া বা আনন্দ অনুভব করা এবং অর্গাজমের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বিপরীতে ম্যানিয়া বা উন্মত্ততার সময় অনেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় ও বেশি সময় ধরে যৌনতা চান।

স্বাভাবিক অবস্থায় তারা যেটা করতে চান না ম্যানিয়ার সময় সে যৌনতা নিয়েও তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আগ্রহী হতে পারেন। এ সময়ে খুব কম ব্যক্তি সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি লাভ করেন। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকে উন্মত্ততার অধ্যায় পার হওয়ার পর সক্রিয় যৌনতার জন্য অনুশোচনাও বোধ করেন।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারের ধরন ও এর লক্ষণের ধারাবাহিকতা, সময়কাল ও তীব্রতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। প্রায় ক্ষেত্রে এগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বেশির ভাগ ব্যক্তির মেজাজের পরিবর্তন কোনো ধারাবাহিক ছন্দ অনুসরণ করে না। যেমন, ম্যানিয়ার আগে তাদের বিষণ্নতার একাধিক পর্ব থাকতে পারে। প্রতিটি পর্বের সময়সীমাও আলাদা। কেউ কেউ এক পর্ব থেকে আরেক পর্বে যাওয়ার সময় মাঝামাঝি একটি অবস্থানে আসেন। অন্যদের ক্ষেত্রে সেটি নাও ঘটতে পারে।

হাই এনার্জির পাশাপাশি শূন্যতার অনুভূতির মতো বিষণ্নতা ও ম্যানিয়ার মিশ্র পর্ব থাকাও সম্ভব। এ কারণে বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে বাইপোলার ডিজঅর্ডারের লক্ষণের পূর্বাভাস দেয়া বা হিসাব রাখা বেশ কঠিন। এ জন্য প্রায়ই তাদের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

কোন বিষয়গুলো মেজাজ পরিবর্তনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, কী করে পরিবর্তনগুলো আগে থেকে চিহ্নিত করা যায় সে বিষয়ে বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তিদের পরামর্শ দেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে বাইপোলার ডিজঅর্ডার ও যৌন সম্পর্কের ওপর প্রভাব নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

অধিকাংশ সময়ে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে ওষুধ। তবে অনেক ওষুধ রোগীর যৌন জীবনকেও প্রভাবিত করে। তাদের কাম বা আনন্দ ও অর্গাজম অনুভবের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যৌন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরিতে এসব ওষুধের প্রভাব জানা থাকলেও তা দূর করতে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।

বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কয়েকজন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। এ-সংক্রান্ত আলোচনা উৎসাহিত করতে নিজেদের যৌনতার অভিজ্ঞতাও প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এমন এক নারী কেসি ও তার সঙ্গী ক্যামেরনের সঙ্গে কথা বলেছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস। কেসি কিশোর বয়সেই টাইপ ওয়ান বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে সচেতনভাবেই সমস্যাটির মোকাবিলা করছেন তিনি। কেসি ও ক্যামেরনের আলাপচারিতা বাংলায় ভাষান্তর করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

কেসি: অল্প বয়সেই আমার মধ্যে লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। তবে হাইস্কুলে যাওয়ার সময় আমি নিজে ও আমার মা সেটা লক্ষ করি। এখন জানি, আমি তখন হাইপোম্যানিয়ায় আক্রান্ত ছিলাম। হাইপোম্যানিয়া হচ্ছে কিছুটা মৃদু ধরনের ম্যানিয়া। টানা কয়েক সপ্তাহ ঘুম কম হতো, মাথায় একের পর এক আইডিয়া আসত। তবে কোনো কাজ শুরু করে আর শেষ করতাম না। ম্যানিয়া শেষ হয়ে গেলে, আমার সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসত, আমি বিধ্বস্ত বোধ করতাম। মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগত না। আমার জটিলতার গ্রেড এ থেকে ডি ও এফ-এ নেমে গিয়েছিল।

আমরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলাম, রোগটি সম্পর্কেও জানাশোনার অভাব ছিল। পরিবারের ধারণা ছিল, আমি কিশোর বয়সের হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছি। যদিও আমার আচরণ সাধারণ কিশোর-কিশোরীর মতো ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর লক্ষণগুলো আবারও প্রকাশ পেতে শুরু করে। একদিন ক্লাসে যাওয়ার সময় আমি ম্যানিয়ার একটি বড় ধাক্কা অনুভব করতে শুরু করি। চারদিকের সবকিছু আমার পরিচিত, অথচ বিল্ডিংগুলো ঠিক মনে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল পৃথিবী গলে যাচ্ছে। আমার মনে একের পর এক চিন্তা আসছিল। এক পর্যায়ে আজেবাজে বকতে শুরু করি। লোকে ভাবছিল আমি নেশা করেছি। এরপর কয়েকজন বন্ধু থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যায়। এর মাধ্যমেই শুরু হয় চিকিৎসা। সেই প্রথম জানতে পারি, আমার বাইপোলার ডিজঅর্ডার রয়েছে।

এখন যে ওষুধ খাচ্ছি সেগুলো বেশ কার্যকর। বহু বছর ধরে থেরাপি নিচ্ছি। এমন ওষুধও খেয়েছি যেগুলোর কারণে আমার যৌন চাহিদা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আক্ষরিকভাবেই কোনো কামনা অনুভব করতাম না। বর্তমান ওষুধের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। আমাকে এখনও হাইপোম্যানিক ও বিষণ্নতার অধ্যায়গুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। থেরাপিস্ট বলেছেন, বাকি জীবন আমাকে এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। কারণ ওষুধের ডোজ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ি।

আমার পরিবার বাইপোলার ডিজঅর্ডারের চিকিৎসার বিষয়ে খুবই সহায়তা করেছে। অন্য যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হাঁপানি বা এ-জাতীয় কিছু যেভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা দরকার, এটিকেও তারা সেভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছে।

একপর্যায়ে আমি এমন একজনের সঙ্গে ডেট শুরু করি যার আচরণ ছিল সহিংস। সে আমাকে আমার বাইপোলার ডিজঅর্ডার নিয়ে লজ্জা দিয়েছে। সে বলত, আমি খুব সমস্যাজনক এবং আমাকে কেউ সত্যিই ভালোবাসতে পারবে না।

ও আমার বিষণ্নতা ও ম্যানিয়াকে নিজের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করেছে। ছেলেটি জানত, যখন আমি হাইপোম্যানিক থাকি তখন এমন সব ঝুঁকি নিতে পারি, যা অন্য সময় অসম্ভব। সে আমার সঙ্গে প্রচুর যৌন সম্পর্ক করেছে, স্বাভাবিক থাকলে আমি হয়তো তাতে সম্মতি দিতাম না। আমার বিষণ্ণতা নিয়ে সে আমাকে অপরাধবোধে ভোগাত এবং সেক্স করতে চাপ দিত, যেটা আমি আসলে চাইতাম না।

থেরাপিস্টরা বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে যৌনতা নিয়ে খুব কম কথা বলেন। যখন তারা বলেন তখন শুধু ঝুঁকির ওপর জোর দেন। যেমন, যদি হাইপোম্যানিক হন এবং ওষুধ না খান তাহলে আপনার কনডম ব্যবহার না করার সম্ভাবনা বেশি। আর তাতে আপনার যৌনবাহিত রোগ বেশি হতে পারে কিংবা নিজের বিপদ ডেকে আনতে পারেন, এমনকি অপমানিত হতে পারেন।

এটি অনেকটা ভয় দেখানোর কৌশলের মতো। তারা বলতে চান ওষুধ না খেলে এবং নিয়ম না মানলে আপনি যৌনরোগে আক্রান্ত হবেন। তারা অধিকাংশ সময়ে বাইপোলার ডিজঅর্ডার সত্ত্বেও সম্মতিমূলক সুস্থ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেন না।

ক্যামেরনের সঙ্গে সম্পর্কের আগে আমি এ বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। তার সঙ্গে এমন একটি সুস্থ সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি যে আমার মধ্যে মর্যাদাবোধ ও ভেবেচিন্তে সম্মতি দেয়ার ধারণা তৈরি করেছে।

ক্যামেরন: আমাদের দেখা হয় বাম্বলে (ডেটিং অ্যাপ)। আমরা কয়েক দিন কথা বলি ও দেখা করি। দুজনের পছন্দের একটি ভিডিও গেম-বারে আমরা দেখা করি এবং শুরুতেই একে অপরকে পছন্দ করে ফেলি।

কেসি: কোভিড মহামারির সময়ে লকডাউনে এলাকার সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন আমাদের প্রথম ডেট ছিল। আমি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করি তারা ফান্ডিং হারায় এবং আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। ক্যামেরনের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়।

আমি একা থাকতাম। তবে আমি জানতাম, ওই সময়ে একা থাকাটা আমার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না। ক্যামেরন এমন একজনের সঙ্গে থাকত, যার সঙ্গী সব সময় তাদের বাসায় আসত। মহামারির তিন সপ্তাহের মাথায় আমরা একসঙ্গে কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি একসঙ্গে থাকতে শুরু করলেও, ক্যামেরনকে আমার বাইপোলার ডিজঅর্ডার সম্বন্ধে জানাইনি। আগের সম্পর্কের ক্ষত আমাকে ভীত করে রেখেছিল।

ক্যামেরনের সঙ্গে থাকাটা কিছুটা ভয়েরও ছিল। কারণ এর আগে আমি যতজনের সঙ্গে ডেট করেছি, তাদের অধিকাংশই ছিলেন সমাজসেবাকর্মী ও মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা। তারা বাইপোলার ডিজঅর্ডার সম্বন্ধে জানতেন।

ক্যামেরন: দীর্ঘদিন বিষণ্ণতায় ভুগেছে এমন ব্যক্তিদের আমি চিনতাম। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কী ধরনের সাহায্য ও স্বাধীনতা প্রয়োজন সেটাও জানতাম। তবে কেসির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে বাইপোলার ডিজঅর্ডার নিয়ে তেমন কিছু জানা ছিল না।

কেসি: আমার চিন্তা ছিল, ‘ধুর এই মেয়েকে নিয়ে যথেষ্ট হয়েছে’ বলে ও চলে যায় কি না!

ক্যামেরন: আমার জননাঙ্গে হার্পিস হয়েছে। বিষয়টি আগে সঙ্গীদের বলতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতাম। তবে আমার মতে প্রকাশ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারটা এমন যে, তুমি এটা মেনে নিতে না পারলে আমাদের সম্পর্ক টিকবে না। কেসির সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস ও প্রথম যৌন সম্পর্কের আগে আমি ওকে হার্পিসের কথা বলেছি।

কেসি: ও আমার সঙ্গে গোপনে এ বিষয়টি শেয়ার করার পর আমি অনুভব করি, ওকেও আমি নিজের কথা বলতে পারি। প্রায় দুই বা তিন সপ্তাহ পরে ওকে আমার বাইপোলার ডিজঅর্ডারের কথা খুলে বলি। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম, তাই সেই কথোপকথনের খুব বেশি কিছু মনে নেই। একসঙ্গে থাকা শুরুর আগে তাকে বিষয়টি খুলে না বলার কারণে আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছিল। আমার মনে আছে ওকে বলার সময় চোখের সামনে সবকিছু ঘোলা হয়ে এসেছিল। ‘আমার বাইপোলার ডিজঅর্ডার আছে’- এটা বলেই আমি রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।

ক্যামেরন: আমার স্মৃতিটা একটু ভিন্ন। মনে আছে, তুমি (কেসি) হালকাভাবে একদিন বলেছিলে, ‘ও হ্যাঁ আরেকটা ব্যাপার, আমি বাইপোলার...’। এরপর যা করছিলে সেটাই করতে থাকলে। আমি এরপর কয়েকটি প্রশ্ন করেছি। যেমন, কখন রোগ ধরা পড়েছে, ওষুধ খাচ্ছ কি না, কোনো লক্ষণে আছি কি না। আমি মনে করেছিলাম, বিষয়টি যদি আমাদের জীবনের একটি অংশ হয় তাহলে বাইপোলার ডিজঅর্ডার সম্পর্কে আরও ভালো করে জানতে চাই। তবে শুরুর আলোচনায় আমি অনেক কিছু জানাতে তোমাকে চাপ দিইনি।

কেসি: বিষয়টি হাস্যকর শোনাতে পারে, কিন্তু ওই সময় আমার একটা বিড়াল খুব অল্প বয়সে হুট করে মারা যায়। এতে আমি বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করি। অবশ্য এতে করে ক্যামেরন সম্পর্কের শুরুতেই পুরো বিষয়টি দেখার একটা সুযোগ পেয়ে যায়। আমি জানি বিষয়টি ওর জন্য খুব কঠিন ছিল।

ক্যামেরন: ক্যাসি আমাকে তার আগের নিপীড়নের কথা জানিয়েছিল। সম্পর্কের প্রথম দিন থেকে আমি জানতাম, বাহ্যিক জিনিসগুলো তাকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনও সময় আসতে পারে যখন ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব নয়। তবে ওই সময়গুলো আমার বা আমাদের সম্পর্কের প্রতিফলন নয়। কখনও কখনও যৌন ঘনিষ্ঠতা ছাড়াই আমাদের সবার সময় ও নিজস্ব জায়গা প্রয়োজন। যৌনতা আরও আনন্দের হয় যখন সবাই সহজ থাকে। আমি কখনই চাই না, কেউ মনে করুক সে যৌন সম্পর্কে যেতে বাধ্য।

কেসি: ছয় মাস পর বুঝতে পারি, এর আগের সম্পর্কগুলোতে আমি সাধারণত যতবার যৌন সম্পর্ক করেছি এখন ততটা হচ্ছে না। আমি নিজের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাই এবং বোঝার চেষ্টা করি কেন এমন হচ্ছে। আমার ধারণা ছিল নতুন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণে আমার কামনা কমে গেছে অথবা আমি হয়তো মহামারি-সংক্রান্ত স্ট্রেসে ভুগছি। তবে পরে বুঝলাম, যখন কোনো সঙ্গী আমার সীমানাকে শ্রদ্ধা করে তখন এটিই স্বাভাবিক।

একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের মধ্যে থাকায় আমার নতুন উপলব্ধি হয়েছে। একটি অস্থির সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি নিজেকে ‘ভালো বাইপোলার ব্যক্তি’, ‘পাগল বা সারাক্ষণ বিষণ্ণ নই’ এমন ভাবতে থাকার চাপ অনুভব করেছি। ফলে সেটা আমার নিজের আবেগকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করেছে। এ অবস্থা যৌনতা ও ঘনিষ্ঠতার সময় নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া, সত্যিই দুর্বল হওয়া ও সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা হওয়ার বিষয়টিকে কঠিন করে তোলে।

ক্যামেরন: আমি এখানে কেসির তথ্য উন্মোচন করতে আসিনি। আমি ওকে প্রশ্ন করি এবং পাশে থাকার চেষ্টা করি। এমন একটি অবস্থা তৈরির চেষ্টা করি যেখানে ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। সে যা বলবে সেটা আমি গ্রহণ করে নিতে প্রস্তুত থাকি।

কেসি: আমি যখন একেবারে নিঁখুত আচরণের ভাব করি সেটা ক্যামেরন লক্ষ করে। সে আমার দেহের ভাষা পড়তে শিখেছে এবং জানতে শিখেছে কখন তার সরে যাওয়া উচিত। আমরা যত বেশি সেক্স করি, ততই নিজেকে খুঁজে পেতে ও ছেড়ে দিতে এবং উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়ে আরও ভালোভাবে শিখতে পারছি।

ক্যামেরন: কেসি কেমন আছে সেটা বোঝার জন্য ওর দেহের ভাষা পড়ার চেষ্টা করি। সে কেমন আছে এবং কখন সেক্স করতে পারে বা করবে না বুঝতে চাই। আমি ঠাট্টার ছলে সব কিছু হালকা করি। যৌনতার ক্ষেত্রে আমি প্রায়ই বলি (একটি নকল কোমল কণ্ঠে), ‘এই তুমি কেমন আছ? আজ রাতে কি একটু সেক্সি টাইম কাটানো যায়?’

কেসি: (হাসি)

ক্যামেরন: ও সেক্স করতে চাইছে কি না বিষয়টি পরিষ্কার থাকে। সে হয় সাড়া দেয় বা দেয় না।

কেসি: আমি আসলে একেবারেই এ বিষয়ে পরিষ্কার। হয় আমি করতে চাই অথবা চাই না।

ক্যামেরন: আমি আগে যৌনতায় আরও ইতিবাচক ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিলাম। এমন সঙ্গীদের সঙ্গে ছিলাম যারা চাইত আমি তাদের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে চুম্বন করি। তবে এখনকার এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমার ঝুলি থেকে আকস্মিক শারীরিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি সরিয়ে নিয়েছি।

কেসি: আসলে আকস্মিক শারীরিক সংযোগের বিষয়টি আমার ভালো লাগে না। বন্ধুরা জানে, আমি জড়িয়ে ধরা পছন্দ করি না। ক্যামেরনের পরিবারের সবাই আবার জড়িয়ে ধরতে খুব পছন্দ করে। তবে ক্যামেরনের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা ভালো তা হচ্ছে, ও জিজ্ঞেস করে, ‘আমি যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরি সেটা কি তোমার ভালো লাগবে?’ বা ‘আমি তোমার পায়ের ওপর আমার পা উঠিয়ে দিই?’

বন্ধুরা খুব শক্তভাবে আমাকে সমর্থন করে। ওদের বেশির ভাগ সামাজকর্মী। আমি কখন হাইপোম্যানিক সেটা বুঝতে ওরা আমাকে সাহায্য করে। তারা বুঝতে সাহায্য করে, আসলেই কি আমি এতটা যৌনতা চাই, নাকি বাইপোলার ম্যানিয়া আমার মস্তিষ্ককে চালিত করার কারণে এটা ঘটছে?

ক্যামেরন যখন আশপাশে থাকে তখন আমি ও আমার বন্ধুরা প্রায়ই আলোচনা করি। এতে আসলেই অনেক লাভ হয়। ক্যামেরন জানে, কখনও কোনো বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লে ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফোন করতে পারবে। তাদের বলতে পারবে, ‘আরে, কেসি সত্যিই এখন অনেক প্রাণবন্ত হয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে! আমি জানি না এই মুহূর্তে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার উপযুক্ত সময় কি না।’

ক্যামেরন: আমরা আমাদের যৌনজীবন নিয়ে সব সময় অন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলি না। তবে কাছের বন্ধুদের একটা সার্কেল থাকা উচিত, যারা জানে কী ঘটনা ঘটছে। যাদের ফোন করলে আসলেই অনেক সাহায্য পাওয়া যাবে।

কেসি: আমি কিছুটা হাইপোম্যানিক বোধ করলে এবং যতটা যৌনতা চাচ্ছি সেটা আমার আসল চাহিদা না- এটা বুঝতে পারলে ক্যামেরন ও আমি কয়েক সপ্তাহ যৌনতা ছাড়া থাকার সিদ্ধান্ত নিই। তবে অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো বজায় রাখতে আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরি বা চুমু খাই।

নিজের খারাপ লাগতে শুরু করলে দ্রুত সম্ভব ক্যামেরনকে জানাতে চেষ্টা করি। ও হালকা ঠাট্টা করে আমাকে সহজ করে তোলে। আমি জানি, আমার সীমানাগুলোকে ও সম্মান করবে। এ বিশ্বাস থেকে আমি ডিজঅর্ডারের পর্বগুলোতে আরও মনোযোগ দেয়ার সময় পাই। ক্যামেরন জানে কীভাবে আমাকে সাহায্য করতে হয়।

আমাদের সম্পর্কের মাধ্যমে যৌনতার ওপর ধীরে ধীরে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি ফিরে পাই। যেমন, আগে যৌনতার সময়ে কোনো কিছু অনুভব না করলেও আমি শেষ পর্যন্ত যেতাম। আর এখন জানি, আমি যদি বলি ‘আমাদের শেষ করতে হবে’, আমরা সেটাই করব।

আমি যখন বিষণ্ণতায় ভুগি তখন এটা খুবই সহায়ক। যৌনতার চাহিদা থাকলেও আমি হয়তো দীর্ঘ সময় তা উপভোগ করতে পারি না। কদিন ধরে আমি যৌন মিলনের সময় জোকস বলছি, যাতে করে যে কথাগুলো বলতে আমি দ্বিধা করি সেগুলো সহজে বলতে পারি। এতে ক্যামেরন বিরক্ত ও বিব্রত হয়।

ক্যামেরন: আমি বিব্রত কারণ ওই মুহূর্তগুলো দুনিয়ার কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারিনি।

কেসি: (হেসে) আসলে ক্যামেরন আমার উন্মত্ত অবস্থার চরম রূপটা দেখেনি। থেরাপিস্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো এবং এখন ওষুধগুলো চমৎকার কাজ করছে বলে আশা করি, সেই চেহারা ওকে আর দেখতে হবে না। উন্মত্ত অবস্থায় পৌঁছালে দশবারের মধ্যে নয়বারই আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। কারণ ওই সময় আমাকে পর্যবেক্ষণ ও বিশেষায়িত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।

ক্যামেরন: আমার কাছে কোনো কিছু ঠিক মনে না হলে, কী করতে হবে সেটা ঠিক করে রেখেছি। কোন হাসপাতালে যাব, যেতে কতক্ষণ লাগবে, কাকে ফোন করব এগুলো সব ঠিক করা আছে।

কেসি: বাইপোলার ডিজঅর্ডারের কারণে আপাতত আমাদের সম্পর্কে বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ক্যামেরনের হার্পিস বা আমাদের পোষা বিড়ালের মতোই এটা আমাদের জীবনের অংশ।

ক্যামেরন: পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বললেই তার ফল ইতিবাচক হবেই।

এ বিভাগের আরো খবর