বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক এবং নার্সের অনুপাত হতে হবে ১:৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত ৩ নার্স থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী দেশে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯১ নার্স প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারিভাবে কর্মরত নার্স আছেন মাত্র ৪২ হাজার।
সারা দেশে নিবন্ধিত নার্স আছেন ৭৬ হাজার ৫১৭ জন, যা চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। এতে করে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাগত উৎকর্ষতা সাধন এবং দায়িত্বপ্রবণ হলে বর্তমানে নিযুক্ত নার্স দিয়ে আরও ভালো সেবা পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও নার্সিং কাউন্সিলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সৃষ্ট পদ অনুযায়ী সারা দেশে ৪৫ হাজার ৫২৭ নার্সের মধ্যে সরকারিভাবে ৪২ হাজার ২৩৯ জন কর্মরত আছেন।
মিডওয়াইফদের জন্য সরকারিভাবে সৃষ্ট পদ ২ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ জন।
এ ছাড়া বেসরকারিভাবে দেশে-বিদেশে প্রায় ৩০ হাজার নার্স, মিডওয়াইফ কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন দেশে ৭৬ হাজার ৫১৭ রেজিস্ট্রার্ড নার্স ও ৬ হাজার ২৮৫ রেজিস্ট্রার্ড মিডওয়াইফ রয়েছেন। যে কারণে কোনো কোনো হাসপাতালে ২০ রোগীর বিপরীতে নার্স মাত্র একজন।
এ ছাড়া নার্সদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। তাদের আবাসনের ব্যবস্থা, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে অনিয়মের জন্য কোনো শান্তির ব্যবস্থা না থাকার কারণে রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে নার্সরা তাদের এ পেশাকে সেবা নয়, চাকরি হিসেবে গণ্য করছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নার্সিং পেশার উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ নার্সও হচ্ছেন অধিকার বঞ্চিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রকৃত মেধাবী নার্সিং অফিসারদের অবমূল্যায়ন করা, ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ সমস্যার উত্তরণে নার্সিং শিক্ষা কোর্সে বিহেভিআর চেঞ্জ কমিউনিকেশন (বিসিসি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। কারণ পেশাগত জীবনে দায়িত্ব ও যথোচিত আচার-আচরণ সম্পর্কেও শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে নার্সদের।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে নার্সিংয়ে শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণে পারিবারিক শিক্ষারও অভাব রয়েছে। নার্সিং পেশায় আসা উচিত সেবার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে যারা আসছেন, তারা চাকরির লক্ষ্য নিয়ে আসছেন। এ ছাড়া এখানে নার্সিং পেশাটি এখনও অনেক অবহেলিত।’
এমন সংকট নিরসনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবার এসব সুবিধা ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য খুব জরুরি ভিত্তিতে অধিকসংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য লোকবল প্রয়োজন। এ কারণে চলতি বছরই নতুন করে অন্তত আরও ৫ হাজার ডাক্তার ও ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে। একই সঙ্গে ঢাকার অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পদায়ন করা গেলে জেলা পর্যায় থেকে ঢাকায় আসা রোগীদের চাপ আরও কমে যাবে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) শিরিন আক্তার বলেন, সংকট নিয়েও মানসম্মত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় করোনার মধ্যে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের বিশেষ সম্মানী পাওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেয়া হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে নার্সদের অধিকার রক্ষায় সারা বিশ্বের মতো আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২২।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর নার্সেস (আইসিএন) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবার দিবসটির প্রতিপ্রাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নার্স: এ ভয়েস টু লিড- ইনভেস্ট ইন নার্সিং অ্যান্ড রেসপেক্ট রাইটস টু সিকিউর গ্লোবাল হেলথ’। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থপনায় শক্তিশালী নার্স নের্তৃত্বের বিকল্প নেই- বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নার্সিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ান ও নার্সদের অধিকার সংরক্ষণ করুন।’
দিবসটি উপলক্ষে নার্সিং ও মিউওয়াইফারি অধিদপ্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপশি সব নার্সিং কলেজ ও হাসপাতাল বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।