দিনে দিনে বেড়ে চলা বয়সের লাগাম টেনে ধরা গেলে কেমন হতো? শুধু লাগাম টানাই নয়; যদি বুড়িয়ে যাওয়া জীবনে আবার ফেরানো যেত তারুণ্য, তাহলে বদলে যেত সব হিসাব-নিকাশ।
আমৃত্যু তারুণ্য ধরে রাখার বিষয়টি ভবিষ্যতে হয়তো আর অধরা স্বপ্ন হয়ে থাকবে না। এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলছে গবেষণা, বেশকিছু সম্ভাবনাও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এসব গবেষণার অনেক বেশ চমকপ্রদ, আবার কোনোটি একেবারেই ‘মেনে নেয়ার মতো নয়’। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল মাইকোবায়োমে সম্প্রতি সেই ‘মেনে না নেয়ার’ মতো এক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বয়সের লাগাম টানতে দারুণ কার্যকর মলের অণুজীব (মাইক্রোব)!
আঁতকে উঠবেন না। ওই গবেষণায় অল্প বয়সী ইঁদুরের মলের অণুজীব ধেড়ে ইঁদুরে প্রতিস্থাপনের পর তাদের ফের তাগড়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে। অণুজীবগুলো বিস্ময়করভাবে ধেড়ে ইঁদুরের অন্ত্র ফের সুগঠিত করেছে, জ্যোতি বাড়িয়েছে চোখে, এমনকি মগজের বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলোও উধাও করে দিয়েছে।
এই গবেষণায় বয়স্ক ইঁদুরের মলের অণুজীব নবীন ইঁদুরে প্রতিস্থাপন করে ঠিক উল্টো ফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নবীন ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্কে তৈরি হয়েছে বার্ধক্যজনিত নানান প্রদাহ, কমে গেছে দৃষ্টিশক্তি। অনেকটা ইঁচড়ে পাকা আচরণ দেখা গেছে সবার মধ্যে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে যেসব রোগব্যাধি এবং শারীরিক দুর্বলতা আমাদের ঘিরে ধরে তার পেছনে দুর্বল অন্ত্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই দুর্বল অন্ত্রকে সজীব করে তোলায় নবীন অন্ত্রের অণুজীব বেশ কার্যকর। অল্প বয়স্ক ইঁদুরের মলের অণুজীবগুলো ধেড়ে ইঁদুরের ক্ষেত্রে ওই কাজটিই করেছে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, ‘আমরা হাইপোথিসিসটি পরীক্ষা করেছি। সেই হাইপোথিসিসটি হলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা বার্ধক্যের সঙ্গে জড়িত বেশকিছু প্রধান রোগের বিস্তারকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং চোখের রেটিনার প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে।’
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মগজের চারপাশে এবং চোখের রেটিনায় প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত দীর্ঘস্থায়ী এই প্রদাহকে বলা হয় ‘ইনফ্লেমিং’। এর সঙ্গে দেহের বিশেষ ধরনের রোগপ্রতিরোধী কোষেরও সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ইঁদুরের অন্ত্রের অণুজীব বয়স্ক ইঁদুরে প্রতিস্থাপন করলে এই প্রদাহ কমে আসতে শুরু করে। আর বিপরীত কাজটি করলে অন্ত্রের বার্ধক্য এবং প্রদাহের লক্ষণ দেখা দেয় ছোট ইঁদুরের মাঝে।
অন্ত্রের জটিল রোগের চিকিৎসায় মল প্রতিস্থাপনের কৌশল এখনও প্রয়োগ করছেন চিকিৎসকরা। তবে মলের অণুজীব বয়সেরও লাগাম টানতে পারে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রথম প্রমাণিত হলো।
গবেষণাটি আরও বড় পরিসরে করার ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়ার জীববিজ্ঞানী সাইমন কার্ডিংয়ের ভাষায়, এই গবেষণাটি যুগান্তকারী। এর মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত রোগের সঙ্গে অন্ত্রের অণুজীবের সরাসরি সম্পর্ক উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই গবেষণা বয়স নিয়ন্ত্রণে অন্ত্রে অণুজীব প্রতিস্থাপনে থেরাপির পথ উন্মোচন করতে পারে।