বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় পরোক্ষ মৃত্যুর হিসাব নেই অধিদপ্তরে

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ০০:১৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে হিসাব দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে করোনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষা প্রভাবে বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সরকারি দপ্তরগুলো বলছে, করোনায় প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যুর হিসাবই কেবল সরকারের হাতে আছে। পরোক্ষ মৃত্যুর পরিসংখ্যান তাদের হাতে নেই।

সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমান, দেশে করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার; যা সরকারি গণনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর একটি প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনায় পরোক্ষভাবে মৃত্যুর সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে। এ বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। করোনা মহামারি পুরোপুরি শেষ হলে মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ডব্লিউএইচওর অনুমান অনুযায়ী, ২০২০-এর ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি, যা বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যানের দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৫৪ লাখ মৃত্যুর কথা জানা যায়।

ডব্লিউএইচওর এই পরিসংখ্যানের মধ্যে সরাসরি করোনাভাইরাসজনিত কারণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মহামারির প্রভাবে পরোক্ষ মৃত্যুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পূর্ণ থাকায় অনেক ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা নিতে না পারা, অনেক ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর সঠিক সময়ে ডায়ালাইসিস করতে না পারা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে মৃত্যু।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, লকডাউন এবং বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে মোটরযান দুর্ঘটনা বা পেশাগত আঘাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকার কারণে মহামারি চলাকালীন মৃত্যুর আনুমানিক সংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মৃত্যু হয়েছে, যা দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের ১০ গুণ এবং বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

এর আগে ল্যানসেটে প্রকাশিত ‘ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন’ (আইএমএইচই)-এর একটি দলের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখ ১৩ হাজার, যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ১৫ গুণ বেশি ছিল।

ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে, বিশেষ করে ২০২০ সালের জুন-জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত মৃত্যুর হার প্রথমবার বৃদ্ধি পেয়েছে। ডব্লিউএইচও অনুমান করছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিতের চেয়ে অতিরিক্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। মহামারির প্রথম বছর শেষে বাংলাদেশে ৪৬ হাজার ৪১ জন মানুষের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছিল।

দ্বিতীয় বছর এপ্রিলে ১৪ হাজার ২৭৬ জনের, জুনে ১৩ হাজার ১৩ জনের, জুলাইয়ে ২০ হাজার ৩০ জনের এবং আগস্টে ১৮ হাজার ৯১৫ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়। এভাবে ডব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জনে পৌঁছেছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর যে তথ্য দিয়েছে সরকার, বাস্তবে মৃত্যু তার চেয়ে হয়তো দ্বিগুণ বেশি হতে পারে, তবে পাঁচ গুণ বেশি মৃত্যু কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে আপনারা সবাই জানতে পারতেন। তবে করোনার প্রভাবে পরোক্ষাভাবে কী পরিমাণ মানুষ মারা গেছে, তা জানতে কাজ করছে সরকার। আগামী জুন-জুলাইয়ে এ বিষয়ে তথ্য জানা যেতে পারে।’

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডব্লিউএইচওর গবেষণায় শুধু করোনা আক্রান্ত হয়ে এই পরিমাণ মানুষ মারা গেছে এমন বলা হয়নি। হয়তো করোনার কারণে চিকিৎসা নিতে না পেরেও মৃত্যু হতে পারে। তবে এই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশে হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে দেশে কী পরিমাণ মানুষ মারা গেছে, এই ধরনের তথ্য সরকারের হাতে নেই। যদি জানা যায়, ২০২০ সালে কী পরিমাণ মানুষ মারা গেছে, এবং ২০২১ সালে এসে তা কত, তাহলে একটা হিসাব পাওয়া যেতে পারে।’

বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর কারণ জানতে উপাত্ত সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে করোনার প্রভাবে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা জানাতে পারেনি সরকারি এই সংস্থা।

এই সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কী কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এটার ডাটা সংগ্রহ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। গত বছর ও তার আগের বছর মৃত্যু দুই থেকে তিন গুণ বাড়তে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে হিসাব দিয়েছে, এত বিপুলসংখ্যক মৃত্যু হওয়ার কথা নয়।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য সংগ্রহ করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। সে ক্ষেত্রে আমাদের তথ্য ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। ২০২১ সালের মৃত্যুর তথ্য জুন-জুলাইয়ে প্রকাশ করা হবে। তখন হয়তো জানা যাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য সঠিক কি না।’

এ বিভাগের আরো খবর