নুর আলম পেশায় নরসুন্দর বা নাপিত। সাড়ে ৬ ফুট লম্বা এ মানুষটিকে উচ্চতা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এলাকাবাসী দাবি করেন, পুরো রংপুর বিভাগে সবচেয়ে লম্বা তিনি, যদিও এ দাবি নিশ্চিত করার মতো তথ্য-উপাত্ত কারও কাছে নেই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষ জিন্নাত আলীর উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। জিন্নাতের বাড়ি ছিল কক্সবাজারের রামু উপজেলায়।
‘আমি লম্বা দেখে সবাই ঠাট্টা-মশকরা করে, আমাকে দেখে হাসে। আমি বাইরে গেলে বিভিন্ন কথা বলে। আমি কিছু মনে করি না। মনে করে কী হবে? মানুষের মুখ কি বন্ধ করা যায়? আমার ১৫ দিন হলো বিয়ে করার। ভালোই আছি,’ বলেন নুর আলম।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর দুল্লারপাড় এলাকার ২২ বছরের যুবক নুর আলমের উচ্চতা মেপে দেখা গেছে ঠিক ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি। তার ওজন ৫৫ কেজি। বাবা নওশের আলী মারা গেছেন। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে নুর আলম তৃতীয়।
উচ্চতা নিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যা হয় নুর আলমের। মাথা নিচু করে কোনোরকমে বাসে উঠতে পারলেও সিটে বসতে পারেন না। কারও ঘরে ঢোকার সময় দরজায় মাথা ঠুকে যায়।
নাপিতের কাজ করতে গিয়েও বিপাকে পড়েন। স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে না পারায় অনেক সেলুন থেকেই তার চাকরি গেছে।
নুর আলমের স্ত্রী তহমিনা বেগম বলেন, ‘তার সঙ্গে আমি ভালোই আছি। সে অনেক লম্বা, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে তার সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে সবাই তার দিকে চেয়ে থাকে আর বলে এত লম্বা মানুষ। টিটকারি-ফাজলামি করে।'
মা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘নুর আলমের বাবাও লম্বা ছিল। লম্বা হওয়ার কারণে সবাই তাকে ন্যাবরা বলে ডাকে। নুর আলম নামে কেউ তাকে চিনে না। তবে আমরা গরিব মানুষ। নুর আলম সব কাজ করতে পারে না। সংসার চালাতে খুব অসুবিধা হয়। নাপিতের কাজ করে যা দুই-তিন শ টাকা পায়, তাই দিয়ে সংসার চালায়।'
নুর আলমের বন্ধু মো. সুজন মিয়া বলেন, 'বর্তমানে লালমনিরহাট জেলা তথা রংপুর বিভাগে এত লম্বা মানুষ আর নাই। তার দিকে মাথা উঁচু করে তাকাতে হয়।'
নুর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক লম্বা হওয়ার কারণে আমি সংসারের সব কাজ করতে পারি না। আমার দেহের এই উচ্চতার কারণে অনেক কাজই করতে সমস্যা হয়। পায়ে ব্যথা করে, বেশিক্ষণ দাঁড়ায় থাকলে পা ফুলে যায়। কোনো রকম দুই তিন ঘণ্টা সেলুনের কাজ করে সংসার চালাই।
'বিয়ের পর সংসারের খরচও বাড়ছে। খুব সমস্যায় আছি। অন্য কোনো কাজও করতে পারি না। তাই নিয়মিত সেলুনের কাজ করে আপাতত সংসার চালাইতেছি।'
সেলুনমালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নুর আলম আমার এখানে সেলুনের কাজ করে। তার কাজের দক্ষতা অনেক ভালো। সে অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার কারণে পায়ের সমস্যা হয়, শারীরিক সমস্যা হয়। সে জন্য সে নিয়মিত কাজ করতে পারে না। মানে যতক্ষণ সে এখানে কাজ করে, ততক্ষণই তার সমস্যা আরও বেশি হয়।'
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় সে বাংলাদেশের দ্বিতীয় লম্বা মানুষ। শুনেছি অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে কাজ করতে পারে না। তবে সে যেহেতু সেলুনের কাজ করে, সে ক্ষেত্রে আমরা তাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আওতায় প্রশিক্ষণ দিয়ে এককালীন ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।'