বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন গঠনের পরামর্শ

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৫১

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। যেখানে দক্ষিণ এশিয়া এটি গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কারের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিশন গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জনবল নিয়োগ, গবেষণাসহ অন্যান্য খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে আগামী বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বাজেট ২০২২-২৩ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে জনস্বাস্থ্য বিশারদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এমন সব পরামর্শ দেন।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের বড় দুর্বলতা হচ্ছে, বরাদ্দের টাকা সময়মতো খরচ করতে না পারা। শুধু বরাদ্দ দিলেই হবে না, পাশাপাশি ব্যয়ের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

জাতীয় সংলাপে স্বাস্থ্যখাতে যে সব অনিয়ম ও সমস্যা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মৌলিক গবেষণার অভাব, ওষুধ বিতরণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা, মানহীন ও ভেজাল ওষুধ, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ঠিকমতো না চলা, উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনের অভাব, স্বাস্থ্যখাতে ও অপর্যাপ্ত জনবল, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার প্রচণ্ড ঘাটতি, দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা না পৌঁছানো ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে আগামী ২০২২-২৩ বাজেটে এসব বিষয়ের উপর নজর দিতে বলেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা মত দেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজ করতে হলে মেডিক্যাল কলেজগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করা আবশ্যক।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়কের সভাপতি ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও স্বাস্থ্যখাতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

প্রবন্ধে তিনি দেখান, দেশের জিডিপি যেভাবে বাড়ছে সে অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় না।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। যেখানে দক্ষিণ এশিয়া এটি গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় হয় তার বেশিরভাগই বহন করে নাগরিকরা নিজেই এবং এর পরিমাণ ৭৩ শতাংশ। ভারতের নাগরিকরা এ খাতে ব্যয় করে ৪৭ শতাংশ এবং নেপালে ৪২ শতাংশ।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ এখনও অনেক কম। এটি বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ।’

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করা উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এক ধরনের গতানুগতিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থান থেকে আমাদের বের হতে হবে এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তবে এটা ঠিক স্বাস্থ্য খাতে বাস্তবায়নে অনেক দুর্বলতা আছে। পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের অর্ধেকই খরচ হয় না।’

অনুষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সক্ষমতার যে অভাব আছে তার সঙ্গে আমি একমত। কিন্তু এটাও ঠিক, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত, এখানে পরিবর্তন দরকার।’

মেডিক্যাল কলেজগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে যে সব সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে এ খাতে ব্যাপক সংস্কারের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

আলোচনায় সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কোনো গবেষণায় নেই। এ দিকে নজর দিতে হবে।’

স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমানের চেয়ে তিনগুণ বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেন তিনি।

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘ওষুধ বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম আছে এবং ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ঠিক মত চলছে না। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সুশাসনের ঘাটতি আছে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীর অনেক ঘাটতি আছে। ইউনিয়ন পর্যায় স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে।’

মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন তিনি।

গরীব মানুষের জন্য ইউনিভার্সেল হেলথকেয়ার সিস্টেম চালুর প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন।

তার মতে, দুর্গম এলাকায় এখনও অনেকেই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক শহরেও চালুর পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তির ব্যবহারকে আরও গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খন্দকার সাখাওয়াত আলী।

এ বিভাগের আরো খবর