দেশে প্রতি ১০০ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে একজন সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সাইক্রিয়াটিস্টস এর উদ্যোগে সিজোফ্রোনিয়া নামক গুরুতর মানসিক রোগের একটি গাইডলাইনের মোড়ক উম্মোচনের অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেন মনোচিকিৎসকরা।
রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার এই মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোলজিস্ট ও অন্যান্য মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল এবং মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ তারিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘দেশের দুটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। উপজেলা পর্যায়েও যেনো এমন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যায়, সেভাবেই গাইডলাইনটি তৈরি হয়েছে।’
আলোচকরা তাদের বক্তব্যে সিজোফ্রোনিয়া গাইডলাইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং এমন আরও পাঁচটি গুরুতর রোগের গাইডলাইন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘বিপিএ অনেক পরিশ্রম করে গাইডলাইনটি তৈরি করেছে। গাইডলাইনটি যাতে উপজেলা পর্যন্ত সবাই ব্যবহার করে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সচেষ্ট থাকবে। সব জেলার সিভিল সার্জনসহ মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই গাইডলাইন পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।’
এ ছাড়া পোস্ট কোভিডে মনোরোগে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যাপারেও মনোচিকিৎসকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অ্যাসোসিয়েশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে কোভিডে মৃত্যু নেই বললেই চলে। শুধু শারীরিক রোগ নিয়ন্ত্রণ করলেই চলবে না, মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও চিন্তা করতে হবে। অসংক্রামক রোগের মধ্যে মানসিক রোগ বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী যেমন, বাংলাদেশে বাড়ছে মানসিক রোগী।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে সামাজিক লজ্জার কারণে চিকিৎসা নিতে চায় না। মানসিক রোগের কারণেই প্রতিবছর ১৭ থেকে ২০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিষণ্নতা থেকে সামাজিক, পারিবারিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য আইন আছে, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।
‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল আরও বিস্মৃত করার কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে দেশব্যাপী। আটটি বিভাগে আটটি হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।’
সিজোফ্রেনিয়ার সব রোগী যেনো চিকিৎসা পায় সেই ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি।
গাইডলাইনটি তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করে সান ফার্মাসিউটিক্যালস (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
এ সময় প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।