দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বামুন্ডা গ্রামের আজিজুর রহমান ও হাসিনা বেগম দম্পতি তীব্র পেটে ব্যথার কারণে ছেলেকে ভর্তি করেছেন দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এক সপ্তাহ ধরে মেহেদী হাসান হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
মা-বাবার অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শুধু দিনে একবার করে মেহেদীকে দেখে যান। এর মাঝে দুইবার চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হয়েছে। তবে ঠিকমতো চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় রিপোর্ট দেখাতে পারেননি।
নীলফামারীর ডিমলার আমির হামজা আট দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার ডান পায়ের রক্তনালী মরে যাওয়ায় ব্যথা শুরু হয়। এরপর দিনাজপুর মেডিক্যালে অপারেশন করে ডান পায়ের ৫টা আঙুলই কেটে ফেলা হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি কিন্তু দেড় মাস আগে আবার ব্যথা শুরু হয়।
‘গত মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি কিন্তু কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আমাকে সেবা দিচ্ছেন। আগে বড় চিকিৎসকরা সকালে-সন্ধ্যায় দুই বার এসে দেখে যেত। ইন্টার্নরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট। অল্প ডাক্তার দিয়েই পুরো হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের পরিচালক কাজী শামীম হোসেন জানান, ২০২১ সালে দিনাজপুর মেডিক্যাল চিকিৎসা সেবায় সারা দেশে প্রথম হয়েছিল। দুই মাস ধরে চিকিৎসক বদলি শুরু হয়। তবে শূন্য পদে নতুন করে চিকিৎসক আসছে না। এখন হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুমোদিত ২০২টি পদের বিপরীতে ৬৯ জন কাজ করছেন। দেড়শ ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন ১০৫ জন।
হাসপাতালের অ্যানেস্থেটিস্ট মফিজুর রহমান চৌধুরী লিটন বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের হাসপাতাল থেকে ছয়জন সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেস্থেটিস্ট বদলি হওয়াতে আমরা সংকটের মধ্যে পড়েছি। আমাদের প্রতিদিন প্রচুর অপারেশন করতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা ঠিকমতো অপারেশন করতে হিমশিম খাচ্ছি।
‘তবুও যে জনবল আছে তা দিয়েই কাজ চালানোর চেষ্টা করছি। এখন রমজান মাসে অপারেশন কম হলেও ঈদের পর অপারেশনের রোগী আবার বেড়ে যাবে। তখন আমরা সংকটের মধ্যে পড়ে যাব। এখনই হাসপাতালের চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো উচিত।’
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরমান হোসেন বলেন, ‘দিনাজপুর একটি বড় জেলা। হাসপাতালের শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। শুধু এই জেলার নয়, পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও জয়পুরহাট জেলা থেকেও এখানে রোগী আসে।
‘রোগীর তুলনায় হাসপাতালে যতজন চিকিৎসক থাকা দরকার তা নেই। চিকিৎসক সংকটের পরও আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে।’
পরিচালক শামীম বলেন, ‘হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০০ হলেও প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ শ জন রোগী আসে। বহির্বিভাগে আসে ৭ থেকে ৮ শ জন। গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি অপারেশন করা হয়।
‘এমনিতেই অনুমোদিত পদের তুলনায় চিকিৎসক কম। তার মধ্যে কয়েকদিন আগে ১২ জন জুনিয়র কনসালটেন্টকে বদলি করা হয়। তার মধ্যে ছয়জন অ্যানেস্থেটিস্ট ছিলেন। আমাদের অপারেশন করতেও সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর বাইরেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এই সংকট দূর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।’