দেশ গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৩০০ রোগী। এর মধ্যে সিংহভাগ রোগীই ঢাকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে রোববার বিকেলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক দিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ২৯১ জন ভর্তি হয়েছে।
এই নিয়ে চলতি মাসে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩। হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪১।
দেশে করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গুর এ প্রকোপ উদ্বেগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে ৩২ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। জুনে এটা ১৭২ জনে ওঠে। জুলাই মাসে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। তাতে সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৮ জন।
জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। আগস্টে এসে চিত্রটি উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে রোববার জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে শুধু ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ২৫৯ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন।
চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হলো ৮ হাজার ৪১ জনের শরীরে। এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৬ হাজার ৭৮৭ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ২১৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ১৩১ ডেঙ্গু রোগী।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে ১২ জনের হয়েছে, আর তিন সপ্তাহে ২৪ জনের মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগে ১৭৯ জনের মৃত্যু ও লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যায়। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড মহামারির মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য জটিলতা বেশি। আগামী দিনে এ ধরনের রোগী বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত মার্চ মাসে সিটি করপোরেশনগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। ডেঙ্গু যেন না হয় তার ব্যবস্থা নিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ডেঙ্গু হলে নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে ডেঙ্গু যেন না হয়, সে জন্য সিটি করপোরেশনকে কাজ করতে হবে।