দেশে ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ কমছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিদিন মৃত্যু সংখ্যা ২৬৪ থেকে কমে ১২০ জন দাঁড়িয়েছে। এটি গত ৫২ দিনের মধ্যে এক দিনে সর্বনিম্ন মৃত্যুর রেকর্ড।
একই সঙ্গে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১৬ হাজার থেকে কমে ৩ হাজারের ঘরে নেমে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ থেকে কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, গেল এক মাসের কঠোর লকডাউনের ফল এটি। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগামী মাসের শুরুতে গিয়ে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি। গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু—দুটিই কমে আসে। এক পর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি।
তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়। সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। যে কারণে জুলাই মাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই মাসে রোগী শনাক্তের সংখ্যা তিন লাখের অধিক। মৃত্যু হয় ৭ হাজার বেশি। জুলাইয়ের শেষ দিকে কিছুদিন শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শনিবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৫২ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই সময়ে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৯৯১ জনের শরীরে।
দেশে এই নিয়ে শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৫ হাজার ১৪৩ জনের। এর আগে এক দিনে কম শনাক্তের খবর আসে গত ২০ জুন। সেদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৪১। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৮২টি। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণ মৃত্যু ও সংক্রমণ কমে এলেও আগস্ট মাসের শেষে ভয়াবহ রূপে এটি ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে।
এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। জুলাইয়ের শুরু থেকে প্রতিদিন ২০০-এর ওপরে ছিল মৃত্যু। এই মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দেয়া হয়। সেই লকডাউনের ফলাফল আমরা এখন পাচ্ছি। প্রথমে সংক্রমণ কমেছে, এরপর মৃত্যু কমে এসেছে।’
তবে এখন যে লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছে, এর প্রভাবে ভবিষ্যতে সংক্রমণ আবার বাড়বে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, ‘এটার প্রভাব আমার আগস্ট মাসের শেষের দিকে পাবে। তিন সপ্তাহ পর আবার মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়বে- এটা বলাই যায়।’
তিনি বলেন, বিধিনিষেধ সারা জীবন পালন করতে হবে, এমন নয়। তবে সংক্রমণ হওয়ার স্থানগুলোতে অবশ্যই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ কারণে ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলোকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। অনেকেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু পরীক্ষা করাচ্ছেন না। অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। এমন করা যাবে না। প্রতিটি রোগীকে শনাক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সংক্রমণ কমে আসার পেছনে একটা বড় কারণ লকডাউন। যদিও লকডাউন ভালোভাবে পালন করা হয়নি, তবু লকডাউনের কারণে মানুষের অবাধ চলাচল ছিল না সড়কে। গত এক মাস কঠোর লকডাউনের ফলে এই মৃত্যু কমে এসেছে। আমরা লকডাউন তুলে ফেলেছি। দেখছি, মানুষের মধ্যে এখন স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই অফিসের ছুটিতে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে যাচ্ছেন এবং কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এভাবে চললে আবার মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়ে যাবে।’