শান্তি রানী শর্মার বয়স ৬০ পরিয়েছে। পেশায় গৃহিনী। পাঁচ সন্তানের মা। দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়। দেশের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক দেখানোর পরও আশানুরুপ ফল না পেয়ে পরিবারের সিদ্ধান্তে ভারতে যান চিকিৎসার জন্য। সেখানে তিনি কলকাতার আইএলএস হাসাপাতালে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সুনীল বন্দোপাধ্যায় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন।
২০১২ সালের পর থেকে প্রতি বছর একবার করে ভারতে চেকআপে যেতেন তিনি। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ভাইরাসের ভয়ে গেল দুই বছর ঘরে বসেই এই চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে সুনীল বন্দোপাধ্যায়ের পরামর্শ নেন শান্তি রানী শর্মা। করোনার মধ্যে এমন চিকিৎসায় দেশের অসংখ্যা মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। দেশে সীমান্ত পেরিয়ে এই পদ্ধাতির মাধ্যমে ঘরে বসেই বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ মিলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংক্রমণের ভয় এবং ভোগান্তি এড়াতে টেলিমেডিসিন সেবাতে ঝুঁকছেন অনেকেই।
করোনাভাইরাসে কারণে দীর্ঘদিন পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ। কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি তৃতীয়পক্ষ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকের টেলিমেডিসিন সেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টাকার বিনিয়মে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিচ্ছে।
বিদেশি চিকিৎসকরা একটি নিদিষ্ট সময় বেধে দিচ্ছেন সেই সময়েই রোগী ভিডিও কলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। বিদেশি চিকিৎসদের পরামর্শে দেশের হাসপাতালেও এসব সেবা ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারে দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন, কখনো এক্স–রে বা পরীক্ষার সুপারিশ করছেন। রোগী পরীক্ষার ফলাফল ম্যাসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে বা ই–মেইলে পাঠাচ্ছেন। চিকিৎসকও সেই মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবস্থাপত্র পাঠাচ্ছেন। কোন পরীক্ষা কোথায় করা যাবে, কোন ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে, তারও পরামর্শ থাকে কিছু ব্যবস্থাপত্রে।
দীর্ঘদিন ঘরে ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে জিডি অ্যাসিস্ট। কারোনায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগের তৃতীয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে জিডি অ্যাসিস্ট।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মঈনউদ্দীন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, মেডিক্যাল ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান। জিডি অ্যাসিস্ট দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক হাসপাতালে গ্রাহকদের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও টেলি-ভিডিও পরামর্শ, দ্বিতীয় চিকিৎসকের পরামর্শ, লজিস্টিক্স, জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে বিদেশে স্থানান্তর, ভিসা প্রস্তুতকরণ, বিমানের টিকিট, হোটেল, আবাসন, পরিবহন ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করে থাকে। তবে করোনা সংকটের কারণে মানুষ দেশের বাইরে যেতে চায় না। যে কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন তারা। সেবাগ্রহীতারা সেই হাসপাতালে সরাসারি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেন। যোগাযোগ করে দেয়ার জন্য কিছু টাকা তারা আমাদের দিয়ে থাকেন। করোনা শুরু থেকেই আমাদের এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই কার্যক্রম চলবে।
যদিও টেলিমেডিসিন সেবার বিষয়ে জাতীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা হওয়ারও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ধরনের বিধি ও নির্দেশনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে বিধিমালা তৈরি করে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘লকডাউনের শুরু থেকেই দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা মুঠোফোন অথবা অনলাইনের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। রোগীর সেবা নিশ্চিতে এমন গাইডলাইন করা হয়েছে। আমাদের গাউডলাইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, দেশের ভূখণ্ডে মধ্যে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে। বিদেশি চিকিৎসকদের টেলিমেডিসিন সেবা দেয়ার অনুমোদন নেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়। সরকার ইচ্ছা করলে এবং কেউ যদি হাইকোর্টে রিট করে সেটা করতে পারে। কারণ এটার দেশিও আইন অনুমোদন নেই।’