ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। তার নাম রিতীন ফাতেমা এলমা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১.৩০টায় রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ ধানমন্ডি দিবা শাখার প্রধান পারভীন আক্তারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এলমা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ ধানমন্ডি দিবা শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির (ক শাখার) ছাত্রী।
বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, 'আমরা ভিকারুননিসা নূন পরিবারের পক্ষ থেকে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাই।'
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শিশুদের সামনে বিপদ হয়ে এসেছে ডেঙ্গু। কোভিড-১৯ রোগের তুলনায় যেটিকে শিশুর জন্য বেশি ঝুঁকির বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, শেষ পর্যায়ে রোগী আসায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়ায় ডেঙ্গু রোগীদের বেশি ভুগতে হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে জ্বর যেমন হয়, ডেঙ্গুতেও তাই হয়। করোনাভাইরাস আর ডেঙ্গুর জোড়া প্রকোপে ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশার বংশবিস্তার থামাতে জোর দিতে বলছেন তারা।
চাপ বাড়ছে হাসপাতালে
ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে এইডিস মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বরে যেভাবে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে, তাতে অনেক শিশুও পাচ্ছেন তারা। জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, পেট ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা, গায়ে র্যাশ ওঠা—এসব লক্ষণ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে। দেশের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী এখন মিটফোর্ড হাসপাতালে। বর্তমানে ২১৬ রোগী ভর্তি রয়েছে। দেশে এখন দ্বিতীয় সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, প্রতিদিনই ১৫-২০ জন শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। তার হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ১৮ জন আইসিইউতে রয়েছে।
অধ্যাপক শফি বলেন, ‘ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে আসছে। এগুলোতে অবস্থাটা বেশি খারাপ হয়ে যায়। দুই থেকে তিনটি শিশু মারা গেছে। শেষ পর্যায়ে তারা এসেছে এবং তারা কো-মরবিট কনডিশন নিয়ে এসেছে। মেনিনজাইটিস, লিউকোমিয়া আক্রান্তরা মারা যাচ্ছে।’
শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গুকে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করে অধ্যাপক শফি বলেন, ‘কোভিডে বাচ্চাদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুরা অনেক ঝুঁকিতে থাকে।’
এ বছর ডেঙ্গু রোগী ৭৪৭২
দেশে করোনা মধ্যে ডেঙ্গু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২০ দিনে ১৯ জনের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার বিকেলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত জানুয়ারিতে ৩২ জনের দেহে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। জুনে এটা ১৭২ জনে ওঠে। জুলাই মাসে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। তাতে সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৮ জন। জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। আগস্টে এসে চিত্রটি উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম শুক্রবার থেকে বিকালে জানানো হয়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে শুধু ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ২১২ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে ৯ জন।
চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হলো ৭ হাজার ৪৭২ জনের শরীরে। এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৬ হাজার ২৫১ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ১৯০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ৯৪ ডেঙ্গু রোগী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত সাত মাসে ১২ জন মারা যায়। আর মাত্র ২০ দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব হাসপাতালে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাড়ে সাত হাজার রোগী। তাদের মধ্যে সর্বমোট ৩১টি মৃত্যুর সংখ্যা আমরা রেকর্ড করেছি। নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি রোগীর সংখ্যার দিকে তাকাই তাহলে এই শনাক্ত রোগীর বিপরীতে এতো মানুষের মৃত্যু, এটি অত্যন্ত শঙ্কার কারণ।