দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর দ্বিতীয়বারের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় পুরুষের তুলনায় বেশি নারী প্রাণ হারিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সীমান্তে করোনা সংক্রমণ যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি পুরুষের তুলনায় নারী মৃত্যু হারও বাড়িয়েছে।
মূলত কাজের প্রয়োজন বাইরে যাচ্ছেন পুরুষরা। পুরুষের দ্বারা নারীরা সংক্রমিত হচ্ছেন। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি থাকায় পরিবারের নারী সদস্যরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ জনই নারী। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৬ জন পুরুষ। এছাড়া ১২ আগস্ট একদিনে ২১৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পুরুষ ১০৭ জন এবং নারী ১০৮ জন। ওইদিনই প্রথমবারের মতো পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দুই মাস আগেও করোনাভাইরাসে মারা যাওয়াদের ৮০ শতাংশই ছিলেন পুরুষ। এদের মধ্যে নারী ছিলেন ২০ শতাংশ। তবে দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন এসেছে।
গত ২৪ ঘণ্টার মৃত্যুর হিসাবে দেখা যায়, করোনায় ৫২ শতাংশ নারী এবং ৪৫ শতাংশ পুরুষ মারা গেছেন। এ যাবত পর্যন্ত করোনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ শতাংশ নারী।
কী কারণে হঠাৎ করোনায় নারীর মৃত্যু বাড়ছে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূলত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনায় পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর মৃত্যু হচ্ছে। কাজের প্রয়োজনে পুরুষরা বাসার বাইরে যাচ্ছেন। তাদের মাধ্যমেই নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
‘করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমিত করার ক্ষমতা দ্বিগুণ। এ কারণে পরিবারের একজন সংক্রমিত হলেও কয়েকদিনের মধ্যে পরিবারের সবাইকে সংক্রমিত করছে। আক্রান্ত বেশি হওয়ার কারণে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে। আর আগে সংক্রমিত হওয়ার পরিমাণ কম ছিল যে কারণে নারীদের মৃত্যুর হারও কম ছিল। তবে আরও সুনির্দিষ্ট কারণ আছে কি না, তা জন্য গবেষণার প্রয়োজন। এ বিষয়ে গবেষণা হলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এখন পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি তাদের মৃত্যুর হারও বেশি।
‘করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে মহিলারা কম আক্রান্ত হতো। আগে ২০ শতাংশ নারী আক্রান্ত হতো। এটা বেড়ে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।’