করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে শত শত মানুষ ভিড় করেও একদিনে নির্ধারিত সংখ্যার বাইরে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতে রাজধানীর দক্ষিণখানে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বসে মর্ডানার টিকা বিক্রি করছিলেন একজন প্যারামেডিক। প্রতি ডোজ টিকার দাম ৫০০ টাকা।
দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা নামে এই ক্লিনিকের মালিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। তিনি ক্লিনিকে বসে অবৈধভাবে করোনাভাইরাসের টিকা বিক্রি করছেন এমন তথ্য পায় দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
ক্রেতা সাজিয়ে একজনকে ক্লিনিকে পাঠায় পুলিশ। টিকা পুশ করার আগেই বুধবার রাত ১১টার দিকে ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে। তার ক্লিনিক থেকে মর্ডানা টিকার একটি ভায়াল (ছোট শিশি) জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে তার বাসার ফ্রিজ থেকে আরও একটি ভায়াল জব্দ করা হয়।
বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, মর্ডানা টিকার প্রতি ডোজ ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন বিজয় কৃষ্ণ।
কীভাবে তিনি টিকা নিয়ে এসেছেন, কে কে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তা জানতে রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।
তবে আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ। একই সঙ্গে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড শুনানির দিন আগামী ২৩ আগস্ট ধার্য করেন বিচারক।
প্যারামেডিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে মর্ডানা টিকার দুটি ভায়াল পাওয়া গেলেও এই ভায়ালগুলো রাখার জন্য কাগজের খালি প্যাকেট পাওয়া গেছে অনেক।
এই ক্লিনিক থেকে কতজন মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের সংশ্লিষ্টরা।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেন, দুজন ব্যক্তি এই ক্লিনিক থেকে টিকা নিয়েছেন, এই তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও অনেক মানুষ টিকা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
সরকারের তত্ত্ববধানে সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরে টিকা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটি কেন্দ্রের জন্য যে পরিমাণ ভায়াল দেয়া হয়, সেগুলো শেষ হলে খালি ভায়ালগুলো ফেরত দিয়ে নতুন ভায়াল (ছোট শিশি) নিতে হয়।
এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেও প্যারামেডিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে কীভাবে মর্ডানার টিকা এলো, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণখান জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ইয়াসিন আরাফাত।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি ভায়ালে অল্প পরিমাণ টিকা পেয়েছি। আরেকটি খালি ছিল। আমরা এগুলো পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠাবো। কীভাবে এই টিকা তার হাতে এল তা তদন্ত করছি।’
বিজয় কৃষ্ণ সরকারে টিকা কার্যাক্রমে উত্তরখান এলাকায় ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে কোন কেন্দ্রে ছিলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
কীভাবে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের কাছে মর্ডানার টিকা গেল তা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিদপ্তর রিপোর্ট দিবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার মূলে কারা থাকতে পারে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশও গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অধিদপ্তরের কারো সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে, সেটি বের করা হবে। যদি তাই হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।