মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যেই রিপোর্ট দেয়া হয়েছে সেটিও ভুয়া বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সম্রাটের বিরুদ্ধে ফেসবুকে এমন অভিযোগ করেন এক নারী। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়। অভিযোগ ওঠার পর সম্রাট নিজেও নিউজবাংলার কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ফেসবুকে দেয়া ওই পোস্টে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চান জেলা শহরের পোড়রা এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী।
অভিযোগ স্বীকার করে সম্রাট বলেন, ‘৫০০ না ২০০ টাকা নিয়ে তার করোনা রিপোর্ট এনে দিয়েছিলাম। পরে টাকা নেয়ার বিষয়টি হাসপাতালের জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ডাকে।
‘পরে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করি এবং সত্য ঘটনা খুলে বলি। এ ঘটনার জন্য সাদা কাগজে লিখিত নিয়েছে এবং আমি মাফ চেয়েছি তত্ত্বাবধায়ক স্যারের কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেয়ার সময় মানুষ যে কয় টাকা দেন তাই নিই। তবে কারও কাছে টাকা চেয়ে নিই না।’
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট দিয়ে থাকে এবং ভুয়া রিপোর্ট দেয়, তাহলে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন জানিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন। পরে তাকে ফের ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কল কেটে দেন।
নাসরিনের অভিযোগটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
বিগত ০২/৮/২১ তারিখে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাই। আমার মোবাইলে এসএমএস আসতে দেরি হওয়াতে দুই বছরের বাচ্চা রেখে তিন দিন ঘুরতে ঘুরতে রিপোর্ট না পেয়ে আমি দেখতে পেলাম, অনেকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা (যেখান থেকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়, সেখানে উনি বসেন) মো. সম্রাট সাহেবের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট নিচ্ছেন।
আমি দেখলাম, ৫ তারিখের রিপোর্ট দিচ্ছে অথচ আমার ২ তারিখের রিপোর্ট এখনও পাচ্ছি না। অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ৫০০ টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট এনে দিচ্ছেন।
তখন আমি বললাম ভাইয়া আমাকেও রিপোর্ট এনে দেন, আমার ছোট মেয়েটার জন্য হলেও ভাইয়া দেন না আমাকে রিপোর্ট এনে। তখন উনি বললেন, টাকা ছাড়া হবে না। আমি বললাম, ভাই এভাবে টাকা নেয়া তো ঠিক না। উনি বললেন, তাহলে রিপোর্ট এনে দেয়ারও আমার দরকার নেই।
আমি হাতজোড় করলাম, ভাই আমি এত টাকা নিয়ে আসিনি, প্লিজ ভাইয়া আমাকে রিপোর্টটা এনে দিন। আমার মেয়েটা অনেক দিন হয় আমার থেকে দূরে আছে। মায়ের মন তো, কী করব। তখন আমি ভাবলাম, আমার এই ছোট মেয়ে রেখে কতদিন দূরে থাকব? যদি কিছু টাকার বিনিময়ে রিপোর্ট পাওয়া যাই সেটা তো ভালোই হবে।
তারপর আমি আমার আপুর কাছ থেকে টাকা এনে উনাকে দেই। আমি উনাকে টাকা দিয়ে ভুল করছি না ঠিক করছি জানি না, তবে আমি আমার মেয়েকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছি। আমার মাথা কোনো কাজ করতে ছিল না।
আমি উনাকে ৫০০ টাকা দিলাম আধা ঘণ্টার মধ্যে আমাকে করোনা নেগেটিভের রিপোর্ট এনে দিলেন। রিপোর্ট পেয়ে আমার সন্দেহ হয়, যে কারণে আমার ভাইয়া তখন ফোন দিয়ে নেগেটিভ না পজিটিভ জানতে চান। তখন আমি বিস্তারিত বলি।
ভাইয়া আমাকে বলেন, যে রিপোর্ট হাসপাতালে আসেনি সেটা অনলাইনে কীভাবে পেল? পরে আমি কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রিপোর্টটা জাল।
তারপর আমি তাকে কল দিয়ে বিষয়টি বললে কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। যার অডিও কল রেকর্ড আমার কাছে আছে এবং আরও উপযুক্ত প্রমাণও আছে।
এ বিষয়টি র্যাব কর্মকর্তা কামাল হোসেন সাহেবকে জানালে তিনি বললেন তার সিনিয়র স্যারকে জানিয়ে জানাবেন। এখনও কিছু জানাননি।
এমতাবস্থায় আমার মতো শত শত লোক করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ এটা না জেনেও জালিয়াতির মাধ্যমে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে আশেপাশের মানুষের মাঝে করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে।
এ ভয়াবহ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মো. সম্রাট সাহেবকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার অনুরোধ করছি। আমার সাথে যেটা হয়েছে এ রকম যেন কারও সাথে না হয়।