বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনা সংক্রমণ হঠাৎ কেন কমে গেল?

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৫১

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ কমে আসার প্রবণতা ঈদ-পরবর্তী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের সুফল। এখন লকডাউন খুলে দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার পরিণামে আগস্টের পর সংক্রমণ আবার বাড়ার আশঙ্কা আছে।

সারা দেশে করোনা সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বগতি, তখন মানুষের জীবিকার স্বার্থে কঠোর লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। এতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে লকডাউন শিথিলের পরপরই কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা রোগী শনাক্ত কমেছে ২৭ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে মৃত্যু কমেছে ৯ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, লকডাউন শিথিলেও সংক্রমণ কমে আসছে কেন?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাইয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু সর্বোচ্চ থাকলেও আগস্টের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে কমে আসছে।

তারা বলছেন, সংক্রমণ কমে আসা ঈদ-পরবর্তী ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের সুফল। এই লকডাউন আরও কিছুদিন চলমান রাখতে পারলে আরও ভালো ফল আসত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারও কমেছে। যদিও শনাক্তের হার এখনও ২০ শতাংশের ওপরে। এর আগে টানা ১০ সপ্তাহ মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। টানা ২০ দিন পর মৃত্যু ২০০-এর নিচে আসে ১৩ আগস্ট।

দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি। গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও শীত মৌসুমে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি।

তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়। সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত। তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

ঈদের পর মে মাসের শেষ দিক থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে এসে পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার ধারণ করে। জুলাই মাসে তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু ছিল ৭ হাজারের বেশি।

টানা দুই মাসের বেশি সময় পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম দেখছে দেশ। করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন বা শাটডাউন দেয় সরকার। চার মাসের বেশি সময়ের এই অচলাবস্থার শেষ হয় বুধবার। চালু হয়েছে গণপরিবহন, খুলেছে দোকানপাট। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোও খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আগস্টের শেষে আবার ভয়াবহ রূপ?

করোনা সংক্রমণ মৃত্যু ও সংক্রমণ কমে আসলেও আগস্ট মাসের শেষে ভয়াবহ রূপে এটি ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। জুলাইয়ের শুরু থেকে প্রতিদিন ২০০-এর ওপরে ছিল মৃত্যু। এই মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দেয়া হয়। সেই লকডাউনের ফলাফল আমরা এখন পাচ্ছি। প্রথমে সংক্রমণ কমেছে, এরপর মৃত্যু কমে এসেছে।’

তবে এখন যে লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছে, এটির প্রভাবে আগামীতে সংক্রমণ আবার বাড়বে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, ‘এটার প্রভাব আমার আগস্ট মাসের শেষের দিকে পাবে। তিন সপ্তাহ পর আবার মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়বে এটা বলাই যায়।’

দুই সপ্তাহ পরে যেকোনো সময় এটি বাড়তে পারে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক ।

তিনি বলেন, বিধিনিষেধ সারা জীবন পালন করতে হবে এমন নয়। তবে সংক্রমণ হওয়ার স্থানগুলোতে অবশ্যই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই কারণে ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলোকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। অনেকেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু পরীক্ষা করাচ্ছেন না। অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। এমন করা যাবে না। প্রতিটা রোগীকে শনাক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সংক্রমণ কমে আসার পেছনে একটা বড় কারণ লকডাউন। যদিও লকডাউন ভালোভাবে পালন করা হয়নি, তবু লকডাউনের কারণে মানুষের অবাধ চলাচল ছিল না সড়কে। গত এক মাস কঠোর লকডাউনের ফলে এই মৃত্যু কমে এসেছে।

‘আমরা লকডাউন তুলে ফেলেছি। দেখছি, মানুষের মধ্যে এখন স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অনেকেই অফিসের ছুটিতে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে যাচ্ছেন এবং কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এভাবে চললে আবার মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়ে যাবে।’

স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া উপায় নেই

বিধিনিষেধ নিয়ে কোভিড জাতীয় কারিগরি কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি সব সময় ভালো পরামর্শ দেয়। তারা জানিয়েছে, লকডাউন আরও কিছুদিন চললে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের আবার সবদিকেই খেয়াল করতে হয়। জীবন-জীবিকার কথা ভেবেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা এর আগেও বলেছি যে, জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এখন যেহেতু সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

সংক্রমণ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি কমতে শুরু করেছে। গত মাসেও আমাদের সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল। সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশে উঠে গেছিল। এখন এটা কমে গিয়ে ২০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছু কমলেও আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর