বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়া করেছে বলে মত প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সারাদেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার সময় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি।
শুক্রবার রাতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়া করেছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। লকডাউন আরও ১-২ সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরােপুরি সুফল পাওয়া যেত।
এতে বলা হয়, সারাদেশে কোভিড-১৯’র সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চলমান অবস্থায় লকডাউন শিথিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
‘আগস্টে লকডাউন কঠোরভাবে পালিত না হলেও জনসমাবেশ হওয়ার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হারে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কোনটাই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। এমতাবস্থায় সাম্প্রতিককালে সরকারের দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করার/তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তে সভা উদ্বেগ প্রকাশ করে।’
শুক্রবার রাতে কমিটির একটি সভাশেষে এ বিবৃতি দেয়া হয়।
সভায় বলা হয়, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব উপলব্ধি করে।
এ অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করে। সভাসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরও কিছুদিন বন্ধ রাখা, রেস্টুরেন্ট ক্যাফেটেরিয়াতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না রেখে কেবলমাত্র বিক্রি করার (home delivery/take away) অনুমতি দেয়া, সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল, যে ক্ষেত্রে সম্ভব বাড়িতে বসে কাজ করা ও অনলাইন সভা/কর্মশালা/প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখে অফিস খোলা রাখা, শতভাগ সঠিকভাবে তিন লেয়ার বিশিষ্ট মাস্ক পরার নিশ্চয়তায় অন্যথায় পুনরায় বন্ধ করার বিধান রেখে অফিস, আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট, বাজার খোলা।
সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিভ-১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সভায় সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সদ্য সমাপ্ত গণটিকা কর্মসুচীর মাধ্যমে এক সপ্তাহে ৫০ লক্ষাধিক মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেয়ায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি মনে করে, ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না।
সভায় গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের টিকা প্রদানের ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। প্রয়োজনে এর জন্য টিকাকেন্দ্র নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।