বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আক্রান্ত না হয়েও’ করোনার অ্যান্টিবডি কীভাবে?

  •    
  • ১৩ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৫০

যশোরে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাড়িতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া পজিটিভ করোনা রোগী ছিলেন, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ৩৮ শতাংশের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আর যাদের বাড়িতে করোনার রোগী ছিলেন না বা কোনো উপসর্গেও ভোগেননি, এমন ২৪ শতাংশের দেহে পাওয়া গেছে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি।

তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না। ফলে করোনার পরীক্ষাও করাননি। অথচ টিকা ছাড়াই তাদের শরীরে মিলেছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি।

যশোরে চালানো এক গবেষণায় যাদের নমুনা নেয়া হয়েছিল, তাদের প্রতি চারজনের একজনের মধ্যেই বিষয়টি পাওয়া গেছে। আবার যেসব বাড়িতে করোনার রোগী ছিলেন, তাদের স্বজনদের প্রতি পাঁচজনের দুজনের দেহে পাওয়া গেছে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটি ও অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যে দেশে গণটিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আশাবাদী সংবাদ দিয়েছে যশোরের সেই গবেষণা।

গবেষণাটি করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর এই গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন।

ইকবাল কবীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হয়তো তাদের কোনো উপসর্গ ছিল না। হয়তো মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তারা গুরুত্ব দেননি।’

তিনি এও জানান, যেসব বাড়িতে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া পজিটিভ করোনা রোগী ছিলেন, ওই সব পরিবারের সদস্যদের ৩৮ শতাংশের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

তারা কেউ আক্রান্ত হলেন না, তাহলে অ্যান্টিবডি কীভাবে সম্ভব- এমন প্রশ্নে গবেষণা দলের প্রধান বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলে তার অ্যান্টিবডি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের গবেষণায় এমন ফল আসছে, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ২৪ শতাংশ মানুষ নিজেরাই জানেন না তারা কবে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাদের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।’

এই গবেষণার ভিত্তিতে নমুনা পাঁচ গুণ বাড়িয়ে আরও একটি গবেষণা করা হবে বলেও জানান ইকবাল কবীর।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হার্ড ইমিউনিটি ও অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা করছে সরকার। ফাইল ছবি

যশোরে সীমিত আকারে চালানো গবেষণাটির ফলাফল কতটা গুরুত্বপূর্ণ- এই প্রশ্নে জাতীয় রোগ প্রতিরোধ, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড় পরিসরে গবেষণা চলমান রয়েছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে। এই গবেষণা প্রকাশিত হলে দেশের সার্বিক চিত্র পেয়ে যাব।’

টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির চেয়ে টিকা নিয়ে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি বেশি স্থায়ী। তবে করোনা সংক্রমণের চেয়ে টিকা নিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় সবচেয়ে ভালো। কেউ মৃদু সংক্রমণ, লক্ষণ ছাড়া সংক্রমণ বা সংক্রমিত হয়ে সবার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, এটা বলা যাবে না।’

টিকা ছাড়া অ্যান্টিবডি তৈরির সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা আক্রান্ত বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অথবা তিনি উপসর্গ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।

এই গবেষণায় ৩৮ শতাংশের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এটা কি আমরা গোটা দেশের চিত্র বলতে পারি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আইসিডিডিআরবি ও আইইডিডিআর এটা নিয়ে কাজ করছে। এই ছোট গবেষণা দিয়ে গোটা দেশের কথা বলা যাবে না।

টিকাই একমাত্র বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলছে। সংক্রমিত হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করার চেষ্টা করা ভুল ধারণা হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। একমাত্র সঠিক উপায়ে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি তৈরি করা যায়।

টিকা নিয়ে অ্যান্টিবডি কত শতাংশে

টিকা নিয়ে অ্যান্টিবডির বিষয়ে ২ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একটি গবেষণা প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধী সিরামের টিকার দুই ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

এই গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম সামসুজ্জামান। টিকা নেয়া ব্যক্তিদের দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি কতদিন স্থায়ী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ডের দুই ডোজ নিলে শরীরে ৯৩ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ পেয়েছি। এই অ্যান্টিবডি করোনা থেকে মুক্তির গ্যারান্টি না দিলেও মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনে।’

তিনি বলেন, ‘ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত শরীরে অ্যান্টিবডি থাকতে পারে, তবে বুস্টার ডোজ লাগবে কি না, সেটি গবেষণার দাবি রাখে।’

এ বিভাগের আরো খবর