করোনা প্রতিরোধ করতে সরকারের গণটিকা কর্মসূচিতে অনেকেই টিকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। ছয় দিনের এ কর্মসূচির শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার।
৩২ লাখ টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ৭ আগস্ট এ কর্মসূচি শুরু হয়। টিকা দেয়া হয়েছে ৪২ লাখ মানুষকে। আবার ১৪ আগস্ট থেকে নতুন করে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে সরকার।
লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেলেও টিকা দেয়া নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে টিকার বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৫০টি করে। প্রতিদিন বিপুল মানুষ টিকাকেন্দ্রগুলোতে হাজির হন। ৩৫০ টিকার মধ্যে নিজেরটি বুঝে নিতে আগের দিন রাত থেকেই লাইনে দাঁড়ান বহু মানুষ। কিন্তু অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। আবার মুখ চিনে টিকা দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তাদের মধ্যেই অনেকের অভিযোগ, রাত ৩টায় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেনাজানা মানুষকে ডেকে ডেকে টিকা দিয়েছেন, এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গণটিকা কর্মসূচির দুটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল এমনই চিত্র।
মোহাম্মদপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে বেশ কয়েকজন লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল থাকা সত্ত্বেও টিকা পাননি বলে জানালেন।
মোহাম্মদ কাঞ্চন থাকেন শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডে। তার অভিযোগ, ‘ভোর ৪টায় টিকার জন্য দাঁড়িয়েছি। এখন ফেরত যাচ্ছি। ওনারা (কর্তৃপক্ষ) নিজের লোক ডাইকা ডাইকা টিকা দিতাছে।’
ওই কেন্দ্রে এমন অভিযোগ করলেন আরও বেশ কয়েকজন। সকালে এসেও টিকা না পাওয়ার ক্ষোভও প্রকাশ করলেন। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫০।
শাহ মোহাম্মদ সোলায়মান থাকেন মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘আমি আজকে ৫৪তম টোকেন নম্বর পেয়েছিলাম। তাহলে যে ৫৫তম টিকা পাবে, তাদের মধ্যে আমার থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজ শেষ পর্যন্ত আমি টিকা পাইনি।’
তিনি বললেন, এভাবে এই কেন্দ্রে অনেক বয়স্ক মানুষই টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন। যারা ভোরে এসেছিলেন তারা টিকা না পেলেও সকালে অনেকেই এসে টিকা পেয়েছেন। তারা কর্তৃপক্ষের পূর্বপরিচিত বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, এখানে যে অনিয়ম চলছে, তা কারও কাছে গিয়ে বলব এমন দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষও নেই।
মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় থাকেন সোহরাব হোসেন। তার দাবি, ‘এখানে লোক চিনে চিনে টিকা দেয়া হচ্ছে। এ জন্য অনেকেই টিকা পাননি।’
একই অভিযোগ রফিকুল ইসলামের। তিনি থাকেন মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটের কাছে। তিনি জানালেন, ‘আমি এসেছি রাত ৩টায়। আমার সিরিয়াল ছিল ২০। কিন্তু আমি টিকা পাইনি।’
এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের টিকাদানের দায়িত্বরত ফোকাল পারসন হিমেল ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই অভিযোগ সত্যি না। আমার কোনো পরিচিত লোক নাই। আমার কাজই হচ্ছে যে আমাকে কার্ড দেবে, তাকে আমি টিকা দেব। তবে অন্য যারা দায়িত্বে আছে, তাদের কেউ কেউ স্বজনপ্রীতি করতে পারে।’
তিনি স্বীকার করেন, ষাটোর্ধ্ব অনেকেই বাদ পড়েছেন। তবে এর সংখ্যা বেশি না।
বেলা সাড়ে ১১টায় মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ জন টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ বুধবার দিবাগত রাত থেকে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকের অভিযোগ, একাধিক দিন টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও তারা টিকা পাননি।
চার দিন ধরে ঘুরেও টিকা পাননি মোহাম্মদপুরের অধিবাসী রিয়াজুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমি রাত ৩টা ২০ মিনিটে এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাইনি। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে শনিবারে আসতে।’
তিনি জানালেন, তার মতো ২০০ মানুষ টিকা পাননি।
ওই কেন্দ্রে টিকা পাননি এমন আরেকজন হলেন হারুন মোল্লা। থাকেন মোহাম্মদপুরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে। দুই দিন ধরে টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও তিনি টিকা পাননি। তিনি বললেন, ‘কালকেও সকালে এসে টিকা পাইনি। আজকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েও টিকা পাইনি।’
মমতাজ বেগম থাকেন মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ। তিনিও ওই কেন্দ্রে দুই দিন ঘুরেও টিকা পাননি। বললেন, ‘সকাল ৬টায় এসেও টিকা পাইনি। আমার হাড়ের ব্যথা। এভাবে টিকার জন্য যে কত ঘুরতে হবে….’
ওই কেন্দ্রে টিকার জন্য যখন অনেকেই অপেক্ষমাণ, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৩১ নম্বর ওয়ার্ড) শরিফুল ইসলাম সেন্টু। টিকা পেতে সাধারণ মানুষ কেন ভোগান্তিতে পড়ছেন, জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। তার আগের রাত থেকেই দীর্ঘ লাইন লেগে থাকে। এ জন্য সবাইকে টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন যেন টিকা পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। তবে আমরা চেষ্টা করছি এলাকায় সবাই যেন টিকা পায়।’