করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে পাঁচ জেলায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জন করোনায় ও ৯ জনের উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ফোকাল পারসন) মহিউদ্দিন খান মুন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪২৯ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২২ জন।
এক দিনে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন রোগী। এ সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৪ জন। ওয়ান স্টপ ফ্লু কর্নারে ১২৫ জন সেবা নিয়েছেন এবং টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ২০ জন।
জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, নতুন করে ১ হাজার ৪১৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৮ হাজার ৬৭৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের। বর্তমানে আক্রান্তের হার ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বরিশাল
বরিশালে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
তাদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়ে ৭ এবং উপসর্গ নিয়ে ৭ জন মারা গেছেন। ১৪ জনের মধ্যে ৯ জনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে নতুন করে ৩৭৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে শনাক্তের সংখ্যা ১২৬ জন, পটুয়াখালীতে ৫৮ জন, ভোলায় ১১৮ জন, পিরোজপুরে ৩২ জন, বরগুনায় ২৭ ও ঝালকাঠিতে ১৬ জন।
এ দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০০ শয্যার করোনা ইউনিটে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২০৪ জন ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে ৬৬ জনের করোনা পজিটিভ।
গত ২৪ ঘণ্টায় এ ইউনিটে ২৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
রাজশাহী
করোনায় এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জন এবং উপসর্গে ৩ জন মারা গেছেন। আর করোনা-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১ জন।
চলতি মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে এটিই সর্বনিম্ন মৃত্যু। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে মারা যান ১০ জন।
এ নিয়ে চলতি মাসের ১১ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট মারা গেলেন ১৭৯ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৯০ জন মারা গেছেন। করোনামুক্ত হয়েও পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জন মারা যান।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে নাটোর ও পাবনায় ২ জন করে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার ১ জন করে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন নারী এবং ৫ জন পুরুষ।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন রয়েছেন।
হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৯ জন।
এদিকে সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজশাহীর ৬৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৫ ভাগ।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় করোনায় এক দিনে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬৫৭ জনের মৃত্যু হলো।
এ ছাড়া ১ হাজার ৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ২৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ হয়েছে। এই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৪৬ জন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, করোনা ডেডিকেডেট জেনারেল হাসপাতালে ২০০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৯১ জন। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ১৫৮ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত ৭ দিনেই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৪০ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৬ হাজার ৫৮৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৮৭৪ জন।
নেত্রকোণা
নেত্রকোণায় করোনায় এক দিনে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২ জন নারী ও ২ জন পুরুষ।
সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া জানান, একই সময়ে জেলায় ২৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯১ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এই পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২৭৬ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২ হাজার ৩০১ জন।