করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। চলতি মাসের ১১ দিনেই ডেঙ্গু শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে জুলাইয়ের মোট আক্রান্তের সংখ্যাকে।
এডিস নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন বা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইসিডিআর) সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ববিদ ড. তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, এসব উদ্যোগ ‘অবৈজ্ঞানিক’।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সকালে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এডিস মশা নিধনে সরকার ও সিটি করপোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সঠিক নয়। সরকাকে অনুরোধ করব, মশা নিধনে সঠিক পদক্ষেপ নিতে। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু কিন্তু ভয়াবহ আকারে দেখা দিচ্ছে। আমার পরিবারেও একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। সে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পাচ্ছে।’
প্রচলিত উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিন, এমন স্লোগান নিয়ে এডিস মশা নিধন করা যায়নি। বাস্তবে আট থেকে ১০ দিনের আগে একটি মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। এ কারণে বিশ্বের সব দেশে সাত দিনে এক দিন পানি জমে থাকা পানি ফেলে দেয়ার কথা বলা হয়।’
মশা নিধনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে লার্ভা নয়, অ্যাডাল্ট (বয়ঃপ্রাপ্ত) মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
ড. তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে মশার লার্ভা মারার যে ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে, তা এই মুহূর্তে দরকার নেই। লার্ভা নিধনে নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে গেলেই হবে। বর্তমানে অ্যাডাল্ট মশা মারার চেষ্টা করতে হবে।
‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনে ফাইন করে চলে আসা হচ্ছে, অথচ সেখানকার অ্যাডাল্ট মশাগুলোর কী হবে? সেখানে যদি মশা মারার ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে অ্যাডাল্ট মশা তো থেকেই যাবে। এ জন্য ঢাকা শহরে নির্মাণাধীন ভবনে ফগিংয়ের মাধ্যমে অ্যাডাল্ট মশা মারার ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। এখন সমস্ত প্রচেষ্টা এবং অর্থ অ্যাডাল্ট মশা মারার জন্য ফগিংয়ে খরচ করতে হবে।’
ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিজিএসের চেয়ারম্যান এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।