মজুত ফুরিয়ে আসায় বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী মডার্না টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ খবর শোনার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতেই টিকা কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেশ কিছু কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে কেউ রাস্তায় ইট পেতে বসেছেন। অনেকেই বাড়ি থেকে চেয়ার নিয়ে গিয়ে রাস্তায় বসেছেন।
রাজধানীর রামপুরার একরামুন্নেছা বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা মুদি দোকানদারের স্ত্রী আমেনা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০০ জনের পিছনে আছি। এর আগে যারা এসেছে তারা রাত ১২-১টা, কেউ বা আবার ২টার সময় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।’
টিকা কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ৯টায়।
আগের তিন দিনের টিকা নিতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও না পাওয়ায় বুধবার ভোরে এসে লাইন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এমন অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরও তিন নারী।
জটলায় সময় কাটাতে গল্পে মেতেছেন তারা। অনেকেই লাইনে দাঁড়ানোর মাঝে নিজের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ফুটপাত থেকে কিনে রাখছেন। দীর্ঘ সারি আর রাতভর অপেক্ষা শুধু করোনাভাইরাসের মডার্নার টিকা পাওয়ার আশায়।
রাজধানীর রামপুরার একরামুন্নেছা বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারীরা টিকা নিতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান। ছবি: নিউজবাংলাবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাত ২টার দিকে আসছি, এখানে দাঁড়িয়ে আছি, ঘুমাতে পারিনি। এর মাঝে একবার শুধু মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছি। আশা করি আজ টিকা পাব।
‘আমার আগেও ১০০ মানুষ সিরিয়ালে আছে। আমার আগে যারা আসছে তাদের মধ্যে রাত ৮টার সময়ও অনেকেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানান জালালউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘রাত ৯টার সময় টিকাকেন্দ্রে এসে লাইন দিয়েছি। আগেও ১০ জন মানুষ আছে। রাতের খাবার খেয়েই এখানে আসছি। মাঝখানে দুইবার বাসায় গিয়েছি।’
এর আগে তাদের কেউ কেউ সকালে এসে টিকা নিতে পারেননি। এমনকি ভোরে এসেও না। তাই কেউ কেউ আগের দিন সন্ধ্যা, আবার কেউ রাত ৯টার পর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হতে থাকে মানুষের সারি।
এদিকে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিনোফার্মের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কাজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের এ তথ্য জানান।
কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ রেখে দিয়ে গণটিকাদান পরিকল্পনা সাজাতে হয়।
টিকা নেয়ার লাইনে দাঁড়ানোর মধ্যেই ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন অনেক নারী। ছবি: নিউজবাংলাএর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ না রেখে বেশিসংখ্যক মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছিল। পরে ভারত থেকে টিকা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন। তাদের দ্বিতীয় ডোজ দিতে দুই থেকে চার মাস দেরি হয়।
জাপান থেকে আসা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে এখন দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষণা দিয়ে ৭ আগস্ট থেকে ছয় দিনের জন্য গণটিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করে। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ছয় দিনের কার্যক্রমের আগেই বেশ কিছু কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ছয় দিনে দেশের ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া ক্যাম্পেইনে চার দিনেই টিকা নিয়েছেন ৪২ লাখের বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে সে কার্যক্রম। আবার ১৪ আগস্ট থেকে নতুন করে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে সরকার।
দেশের সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড এবং সিটি করপোরেশন পর্যায়ে রাত থেকেই টিকা প্রত্যাশীদের লাইন দেখা যায়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত।
টিকাদান কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলার কথা বেলা ৩টা পর্যন্ত। অনেক স্থানে বেলা ১১টার পর পরই টিকা শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়াও গেছে।
মাত্র সাড়ে ৩০০ জনকে দেয়া হবে টিকা। সে জন্য রাত থেকেই লাইনে দাঁড়ান অনেকে। ছবি: নিউজবাংলারাজধানীর চলমান টিকা কেন্দ্র ছাড়া উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ ওয়ার্ডে ৫৪টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ ওয়ার্ডে ৭৫টি অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হয়েছে।
রাজধানীর একরামুন্নেছা বালক উচ্চ বিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে ভ্যাকসিনেশন কাজে সংশ্লিষ্ট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নার্গিস পারভীন নিউজবাংলাকে জানান, ‘বিগত কয়েক দিন টিকা নিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু করার নেই।
‘আমাদের কেন্দ্রে ৩৫০ জনকে টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেই ৩৫০ জনকে সিরিয়াল অনুযায়ী টিকা দেয়া হবে। বাকি মানুষ আগামীকাল আসবেন। আগামীকালও ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হবে।’
এমন সংকট সমাধানে চেষ্টার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ভোটের আনন্দের মতো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছে। রোববারের মধ্যে দেশে আসছে আরও ৫৪ লাখ টিকা। এই টিকা দেশে এলে টিকাকেন্দ্রে গতি বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘টিকার ঘাটতি মেটাতে চীন থেকে ৩ কোটি বাড়িয়ে ৬ কোটি টিকা কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এসব টিকা পেলে টিকা কার্যক্রমের গতি ধরে রাখা সম্ভব।’