শেষ হতে যাচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কয়েকমাস ধরে চলা বিধিনিষেধ। আগামী বুধবার থেকে চলবে বাসসহ গণপরিবহন; খুলবে অফিস আদালত ও দোকানপাট। শাটডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণার দিন বেশ কয়েকটি শর্তও জানিয়েছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোববার বিকেলে এক প্রজ্ঞাপনে শাটডাউন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনীতির কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে ১১ আগস্ট থেকে অফিস আদালত, যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়া হবে।
পর্যটনকেন্দ্র, জনসমাগম ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি নিয়ে কিছুই উল্লেখ নেই প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ না করার অর্থ এগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে বলে নিউজবাংলাকে জানালেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই মানেই আগের শর্ত বহাল থাকছে। অর্থাৎ কঠোর বিধিনিষেধ চলার সময় যা ছিল, তা-ই থাকবে।’
শাটডাউন তুলে নেয়া পরবর্তী মানতে হবে যেসব শর্ত:
০১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে।
০২. আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট।
০৩. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।
০৪. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
০৫. সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে।
০৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
০৭. সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
০৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ববহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা শনাক্ত হয়। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি।
তবে এ বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়। ওই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন বা শাটডাউন দেয় সরকার।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ১ জুলাই থেকে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে, যা পরিচিতি পায় শাটডাউন হিসেবে। পরবর্তী সময়ে এই লকডাউন আরও সাত দিন বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়।
এরপর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয় এই শাটডাউন। পরে ২৩ জুলাই থেকে আবার বহাল করা হয় এই বিধিনিষেধ।
ঈদ-পরবর্তী শাটডাউন চলার কথা ছিল ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় তা বাড়ানো হয় আরও পাঁচ দিন।