সিলেট নগরের ১৮ নং ওয়ার্ডের বখতিয়ার বিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নিতে এসেছিলেন বৃদ্ধ শরিফ উদ্দিন। লকডাউনের মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সকালেই কেন্দ্রে আসেন তিনি।তবে টিকা নেয়া হয়নি তার। দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্র থেকে তাকে জানানো হয় আগামীকাল আসতে। আজ শেষ হয়ে গেছে টিকা।কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘টিকা না থাকলে আমরারে আইতে কওয়া অইলো কেন। প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইয়া থাকলাম। পরে কয় যাইতামগি। ইলান ডেইলি আইমু না কিতা?’
এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে।
রোববার সকালে সিলেট নগরে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয় করোনা প্রতিরোধী গণটিকা ক্যাম্পেইন। নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের ৮১টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়। তবে সকালের মধ্যেই বেশির ভাগ কেন্দ্রের নির্ধারিত টিকা শেষ হয়ে যায়। অথচ তখনও কেন্দ্রগুলোতে টিকাগ্রহীতাদের দীর্ঘ লাইন ছিল। টিকা না পেয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয় তাদের।টিকা নিতে আসা কয়েকজনের অভিযোগ, ওয়ার্ডের ভোটার না হওয়ায় কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলরের লোকজন তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। টিকা নিতে দেয়নি।দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের ১০ নং ওয়ার্ডের জালালাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে শ-খানেক লোক ভিড় করে আছেন। তবে এই কেন্দ্রের নির্ধারিত ৩৫০ ডোজ টিকা শেষ হয়ে গেছে আগেই। ফলে জড়ো হওয়া লোকজনকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
টিকা নিতে আসা আয়েশা বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহকারে এই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি, রোদের মধ্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আর এখন জানানো হচ্ছে আজকের মতো টিকা শেষ। আগামীকাল আবার আসেন। তাহলে আমাকে এত সময় অপেক্ষা করতে হলো কেন?’একই অবস্থা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডে মিরাবাজারে শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। নগরীর যতরপুর এলাকার জিল্লুর রহমান জানান, তিনি সকাল ৯টায় কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু স্বল্পতার কারণে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা নিতে পারেননি।এদিকে সিলেট নগরীর ২ নং ওয়ার্ডের রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক কেন্দ্রে ছিল গণটিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তা সামাল দিতে স্বেচ্ছাসেবী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। উপেক্ষিত হয়েছে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধিও। আবার টিকা নিতে না পেরে অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।টিকাকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এখানে এসেছি। এসে নিবন্ধন করেছি। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল এলে টিকা নিতে পারব। আমাদের মতো এভাবে শত শত নারী-পুরুষ টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মজুত শেষ।’
টিকার স্বল্পতার কারণে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নিতে পারেননি অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বেশি। আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে ২০০ জনের টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু গ্রহীতার সংখ্যা বেশি, এ জন্য তাদের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রভেদে অতিরিক্ত আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। সে সুবাদে সিলেট নগরীর ৮১টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে আমরা ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে টিকা দিচ্ছি। কিন্তু তার চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষ কেন্দ্রে ভিড় করেছেন। ফলে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’তিনি বলেন, যারা টিকা নিতে পারেননি, তাদের হতাশার কিছু নেই। পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা দেয়া হবে। কেউ বঞ্চিত হবেন না।ডা. জাহিদ বলেন, সিলেটে আগামীকালও গণটিকা ক্যাম্পেইন চলবে। ৩ দিনে নগরের ৬৫ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হবে।