রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে অল্প খরচে করোনাপ্রতিরোধী টিকা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী। কিউবা ও ইরান রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে টিকা বানাতে পারলে, বাংলাদেশ কেন পারবে না এমন প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক ওয়েব সেমিনারে অংশ নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন আমদানি না করে অল্প খরচে দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব। রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে কিউবা ও ইরানের মতো দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারলে আমরা কেন পারব না?’
এসময় প্রতিটি টিকা তৈরিতে মাত্র আধা ডলার খরচ পড়বে দাবি করে টিকা উৎপাদনের ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান তিনি।
এর আগেও এই চিকিৎসক বলেছিলেন, সরকার চাইলে রাশিয়া থেকে টিকা কেনার মধ্যস্ততা করবেন তিনি।
জাফরুল্লাহর দাবি, রাশিয়ার যে প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদন করছে, সেটির সঙ্গে তার যোগাযোগ আর তার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ওই প্রতিষ্ঠানের লোকাল এজেন্ট।
ওই সময় রাশিয়ায় তৈরি ‘স্পুৎনিক-ভি’ টিকার দুই কোটি ডোজ আট ডলারে সরকারকে এনে দিতে চেয়েছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকার যদি রাজি হয়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই কোটি টিকা এনে দিতে পারি। চীন থেকে সরকার ১০ ডলারে নিচ্ছে, আর আমি বলেছি আমি আট ডলারে সেটা ঢাকায় পৌঁছে দেব।’
আলোচনায় সভায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পরীমনি প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যবসায়ীরা পরীমনিকে অর্থায়ন করেছেন, তারা যদি দেশে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থায়ন করেন তাহলে দেশের সবার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা যাবে।’
জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ‘কোন মাসে কত টিকা আসবে দেশে সেটি জনগণকে জানাতে হবে।’
মিউটেশনে আরও শক্তিশালী করোনার ডেল্টা ধরন
টি১৯আর নামে একটি মিউটেশনের কারণে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন অণুবিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
শনিবার গণস্বাস্থ্য ভবনের সভাকক্ষে ‘ডেল্টা ভাইরাসের বিপর্যয়কর প্রভাব এবং সম্ভাব্য উপায়: একটি গভীরতম পর্যালোচনা’ নামের ওই ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিজন কুমার শীল বলেন, ‘ডেল্টা ধরনের ভয়াবহতার জন্য অন্যান্য মিউটেশনের (পর্যায়ক্রমে রূপান্তর) সঙ্গে টি-১৯আর মিউটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
সেমিনারে অংশ নেয়া অন্য বক্তারা বলেন, করোনার ডেল্টা ভাইরাস খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়ায়। পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ভাইরাসের ভয়াবহতা রোধে কেউ একজন আক্রান্ত হলে তার নিকটজন সবাইকে পরীক্ষা করাতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সব জনগণের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিজন কুমার শীল বলেন, ‘গ্রামের মানুষের করোনা নিয়ে যে কুসংস্কার রয়েছে সেটি দূর করতে হবে। উপসর্গ না থাকলে করোনা হয়নি, এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হতে হবে।’
সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টিকা নিলে করোনায় মুত্যুহার কম।’
বিজন কুমার বলেন, ‘পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হব এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ডেল্টা ভাইরাসের চিকিৎসার মতো ড্রাগস বিশ্ববাজারে আছে।’
জিংকের সমন্বয়ে তৈরি ভিটামিন সি গ্রহণ ডেল্টা ভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায় দাবি করে বাংলাদেশে এ ধরনের ভিটামিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন পূর্ব এশিয়ায় সার্স প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই বিজ্ঞানী।
ওয়েব সেমিনারে আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. এস তাসাদ্দেক আহমেদ এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।