বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা কেন্দ্রে ‘ভোটের লাইন’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ আগস্ট, ২০২১ ১৪:০৪

টাঙ্গাইলের বাসাইলের নথখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে টিকা নিতে আসা আবুল কাশেম বলেন, ‘বাবারে প্রথমে খুব ডরাইছিলাম। তাই টিকা নেই নাই। মেলাজনেই মেলা কথা কইছে। তারপরও টিকা নেই নাই। ভাবছিলাম কী না কী হয়। তয় আজকে দেখলাম বেক্কেই নিবার আইলো। তাই আমিও তাগো পিছে পিছে আইছি আইডি কার্ড নিয়া।’

জমজমাট নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দেশে যে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, সেই স্মৃতি যেন ফিরিয়ে আনল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচি।

প্রথম দিন শনিবার দেশের বেশিরভাগ টিকাকেন্দ্রে দেখা গেছে আগ্রহীদের দীর্ঘ সারি। দেখে মনে হতেই পারে সেখানে ভোট চলছে। একেক করে প্রত্যেককে প্রবেশ করানো হচ্ছে কক্ষে; দেয়া হচ্ছে টিকা।

সারা দেশে একযোগে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে শনিবার সকাল ৯টা থেকে; চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত।

প্রতিটি কেন্দ্রেই পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিবন্ধন করা হচ্ছে। এরপর দেয়া হচ্ছে টিকার প্রথম ডোজ।

‘প্রথমে ডরাইছিলাম এখন আর নাই’

টাঙ্গাইলের বাসাইলের নথখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে টিকা নিতে আসেন ৬২ বছর বয়সী আবুল কাশেম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাবারে প্রথমে খুব ডরাইছিলাম। তাই টিকা নেই নাই। মেলাজনেই মেলা কথা কইছে। তারপরও টিকা নেই নাই। ভাবছিলাম কী না কী হয়। তয় আজকে দেখলাম বেক্কেই নিবার আইলো। তাই আমিও তাগো পিছে পিছে আইছি আইডি কার্ড নিয়া।

‘আওয়ার নগে নগেই দেহি ডাক দিলো আমারে। ভিতরে ঢুকলাম। আইডি কার্ড নিল, কাগজে কী জানি লেখল আর মোবাইল নাম্বার জিগাইল...তারপরই সিরিঞ্জ বাইর কইরা ভিতরে ওষুধ ডুকাইয়া আমার ডাইন হাতের ডেনায় ডুকাইয়া দিল। এট্টুও দুক্কু পাই নাই। এহন আর ডর নাই।’

কাশেমের মতো সকাল থেকেই এ কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহীরা ভিড় করেছেন। জেলার ৯৮টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় চলছে গণটিকাদান। সবগুলো কেন্দ্রেই কম-বেশি ভিড়। মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি কোথাও।

জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সিলেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

বিপুল উৎসাহে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে দেখা গেছে সিলেটের গ্রহীতাদের। জেলা ও মহানগরী এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক বুথে শুরু হয় গণটিকাদান। প্রতিবন্ধী ও চলাচলে অক্ষমদের টিকা দেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থায়।

সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ডে ৮১টি বুথে শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ হাজার ৩০০ জন পাবে টিকা।

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, দেশব্যাপী এক দিন ক্যাম্পেইন চললেও সিলেট মহানগরীতে রোববার ও সোমবারও চলবে এই কার্যক্রম।

জেলার প্রতি ইউনিয়নে তিনটি করে মোট ৩০০টি বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ২০০ জন করে মোট ৬০ হাজার জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

নগরীতে মডার্না এবং উপজেলা ও জেলায় দেয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা।

নগরের রেড ক্রিসেন্ট মাতৃমঙ্গল হাসপাতালে সিলেট সিটি করপোরেশন শনিবার সকাল ৯টায় টিকা ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। তাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

মেহেরপুরে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ বৃদ্ধদের

মেহেরপুরের ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় চলছে গণটিকাদান। বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

টিকা নিতে এসে ফিরে যাওয়া সদরের ৪ নম্বর বামন্দী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্দ্ধ হাজী আজীরন খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বয়স ষাট বছর হই গিছে। আমার নাম নাই। মেম্বার আমার নাম দেইনি। এ জন‍্য আমি টিকা পাইছিনি। তাই বাড়ি চইলি যাইছি।’

আরেক বৃদ্ধা জমেলা বেগম জানান, তার বয়স ৫৯। ৬০ বছর না হওয়ায় তিনি টিকা পাননি।

তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। তাই ইউনিয়ন পরিষদে টিকা নিতে আসছি। কিন্তু আমার বয়স ষাট বছর না হওয়ায় টিকা দিল না। অথচ ত্রিশ বছরের একজনকে টিকা দিল।’

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতে চেয়ারম্যান সাহেব ফোন দিয়ে বলল, আগামীকাল পরিষদে টিকা প্রদান করা হবে। ষাটোর্ধ্ব ৬৫ জনের নাম দিতে হবে। আমি পইড়ি গিছি বিপদে। সত্তর, আশি বছরের যা মানুষ আছে তা ১০০ জনের উপরে হবে। তাই আমি মানুষের অত‍্যাচারে ফোন বন্ধ রাইখিছি।’

তবে সিভিল সার্জন নাসির উদ্দিন বলছেন, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন। তিনি জানান, আঠারো ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রথম দিন ১২ হাজার ৬০০ জনকে টিকা দেয়া হবে।

চট্টগ্রামে অগ্রাধিকারের তালিকায় দুর্গম এলাকার মানুষ

চট্টগ্রামে মহানগর ও উপজেলার মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে গণটিকাদান চলছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৪টি উপজেলার ২০৩টি বুথে এবং মহানগরের ১২৩টি বুথে চলবে টিকাদান। পৌর এলাকার বাসিন্দারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে টিকা পাবেন।

জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বয়স্ক, নারী, প্রতিবন্ধী ও দুর্গম এলাকা থেকে আগতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে পাঁচ জনের একটি টিম টিকাদানে কাজ করছে৷ এর মধ্যে দুজন সরাসরি টিকা দান করছেন। অন্য তিনজন তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন।’

অব্যবস্থাপনা লালমনিরহাটে

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও দুই পৌরসভায় টিকা দেয়ার জন্য খোলা হয়েছে ১৫০টি কেন্দ্র। প্রথম দিন টিকা পাওয়ার কথা ২৯ হাজার ৪০০ জনের।

লালমনিরহাট পৌরসভায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন বিদ্যালয়ে নারী-পুরুষদের একই বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন গ্রহীতারা। সেই সঙ্গে ভিড় সামলাতে প্রশাসনের লোকজন দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তাদের।

জেলা সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় নিউজবাংলাকে জানান, প্রথম দিন হওয়ায় উপচে পড়া ভিড় প্রায় সব কেন্দ্রে। আস্তে আস্তে প্রতিদিন ভিড় কমবে।

‘আমরা শেখ হাসিনার কাছে ঋনী’

নাটোর সদরের দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের শিবদূর গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে টিকা নিতে আগ্রহীদের ভিড়। সেখানে চেয়ার নিয়ে বসে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ শামসুল হক।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের বাড়ির কাছে টিকা লেওয়ার সুযোগ করে দিছে। আমরা শেখ হাসিনার কাছে ঋনী হয়ে থাকনু।’

এই কেন্দ্রেই হুইলচেয়ারে করে এসেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক সরকার।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাইত্যে টিক্যা লিতে আসিছি। গ্রেরামেত টিক্যা দেয়ার ব্যবস্থা করাত টিকা লেওয়া অনেক সহজ হছে।’

এই জেলার ৬ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও নাটোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে একযোগে চলছে গণটিকাদান।

সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, শনিবার মোট ৩১ হাজার ২০০ জনকে টিকা দেয়া হবে।

টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের লোকজন নজরদারিতে আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।

রংপুরে অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা পাচ্ছে না আগে থেকে নিবন্ধনকারীরা

রংপুরে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় সকাল থেকেই। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সেখানে নিবন্ধন করে টিকা নিচ্ছেন আগ্রহীরা। তবে আগে থেকে যারা নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের সেখানে টিকা দেয়া হচ্ছে না বলে জানালেন অনেকে।

নগরীর সাতমাথা খাশবাগ এলাকার মুনিরা বেগম বলেন, ‘খাশবাগ স্কুলে সাড়ে দশটার দিকে গেছিলাম। আমাকে বলেছে যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করেছেন আগে, তাই মেডিক্যালের কেন্দ্রে যান। আমি মেডিক্যালের কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছি।’

নগরীর বাবু খাঁ এলাকার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি আগে রেজিস্ট্রেশন করেছি। তাই ওয়ার্ডের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেয়নি। এখন মেডিক্যালে যাচ্ছি।’

নগরীর লালকুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দেখা যায়, সেখানে ২০০ জনকে টিকা দেয়ার কথা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এই কেন্দ্রে ১৬০ জনের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে সেখানকার পরিদর্শক রায়হানুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত মানুষ হওয়ায় এই কেন্দ্রে ২০৯ জনকে টিকা দেয়া যাবে। এর বেশি হলে মজুত নেই।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন ও জেলার আট উপজেলায় ৬৫ হাজার ৪০০ জনকে টিকার আওতায় আনা হবে। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে টিকাদান কেন্দ্রে তিনটি করে বুথ রয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে একটি করে টিকাদান কেন্দ্রে তিনটি বুথ রয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েও টিকা না পাওয়ার অভিযোগ

কুদ্দুস ব্যাপারির বয়স আশি, থাকেন রাজবাড়ী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। শনিবার সকালেই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকার জন্য তিনি যান ওয়ার্ডের কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে, পরিচয়পত্র দেখিয়েও তিনি টিকা পাননি।

এই অভিযোগ সেখানকার অনেকেরই। আবার অনেক কেন্দ্রে আগে থেকে নিবন্ধন করা লোকজন গেলে তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে না।

৮ নম্বর ওর্য়াডের মো. সালাম জানান, রেজিস্ট্রেশন করে টিকা কার্ড আনার পরও বলা হয়েছে পরিচয়পত্র দেখাতে। তাই টিকা না নিয়ে ফেরত যান।

নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে টিকা পাওয়ার কথা ২০০ জনের।

এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটন জানান, বয়স্কদের ক্ষেত্রে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই টিকা দেয়া হবে। সরেজমিনে তা মানা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন।

তিনি জানান, রাজবাড়ী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড, পাংশা পৌরসভার ১টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মোট ৫২টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৩০০ জন শনিবার টিকা পাবেন।

এছাড়া, গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন ব্যাপক সাড়া মিলেছে বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোণা, নীলফামারী, পাবনা, পঞ্চগড়, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও শেরপুরেও।

প্রায় সব কেন্দ্রেই দুপুর ১২টা নাগাদ টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি মানুষের নিবন্ধন করে টিকা নিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন নিউজবাংলার প্রতিবেদকরা।

এ বিভাগের আরো খবর