নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা শহরের একটি ক্লিনিকে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় জোড়া শিশু লাবিবা ও লামিসার। জন্মের পর থেকেই নানা শারীরিক জটিলতা ছিল তাদের। খাওয়ার পর ফুলে থাকত পেট।
দেড় মাস বয়সে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু দুটিকে নেয়া হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করা হয়। এরপর থেকে জটিলতা আরও বাড়তে থাকে।
জন্মগত জটিলতা থাকা শিশু দুটিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে মা মনুফা বেগম ও বাবা লাল মিয়ার। তাদের চিকিৎসায় যে টাকা লাগবে, তা কোথা থেকে পাবেন, এ নিয়ে ভাবনায় দিন কাটছে দম্পতির।
কী অবস্থা শিশু দুটির
মনুফা ও লাল মিয়া জানান, দুই শিশুর একজন হাঁটতে চাইলে অন্যজন বসতে চায়। একজন খেতে চাইলে অন্যজন কাঁদে। একজন ঘুমাতে চাইলে অপরজন চিৎকার করে।
জলঢাকার কৈমারী যদুনাথ পাড়া এলাকার এ দম্পতির দুই সন্তানের পিঠ থেকে কোমরের একটি নির্দিষ্ট অংশ জোড়া লাগানো।
তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও আলাদা করা সম্ভব হয়নি জোড়া সন্তানকে। তাদের চাওয়া, এ অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি পাক প্রায় ২৮ মাসের শিশু দুটি।
লাবিবা-লামিসার মা মনুফা বেগম জানান, যমজ শিশুর জন্মের পর থেকে কষ্টের শেষ নেই তার। ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। শিশুদের সঙ্গেই সবসময় থাকতে হয়। প্রতিটা দিন যে কীভাবে কাটে, তা বলে বোঝানো যাবে না।
তিনি আরও জানান, দুইজনকে কোলে নিয়ে সবসময় বের হওয়া যায় না। সবার কোলেও তারা যেতে চায় না।
শিশু দুটি বড় হলে কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই মনুফার।
দরকার অর্থের
লাবিবা-লামিসার দাদি ইলমা খাতুন জানান, দুই নাতনির চিকিৎসায় অনেক টাকা দরকার। অনেকে সহযোগিতা করেছেন। চিকিৎসার জন্য ঢাকা পর্যন্ত গিয়েছেন তারা। চিকিৎসাটা দ্রুত শেষ হওয়া দরকার।
প্রতিবেশী মাহমুদা বেগম বলেন, ‘দিন আনি দিন খায় ওমরা (তারা)। ছাওয়া (সন্তান) দুটাক অপারেশন করি আলাদা করা খুব দরকার। ওমার তো সাধ্য নাই। অনেক দিন থাকি শুনিছি যে অপারেশন হইবে হইবে।
‘এলাও (এখনও) হয়ছে না। মেডিক্যালও গেইল কয়বার। অনেক টাকা পাইসা নাগে, মানুষ আগায় আসিলে ওমার খুব উপকার হয়।’
লাবিবা-লামিসার বাবা লাল মিয়া জানান, তার সন্তানদের জন্মের পর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের বোর্ড বসানোর কথা থাকলেও করোনার কারণে সব বন্ধ।
তিনি আফসোস করে জানান, শিশু দুটি তো বড় হচ্ছে। অপারেশন করার সময় অনেক টাকা দরকার। তার সে সামর্থ্য নেই।
পাবনার জোড়া শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার মতো লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে আসবেন, এমনটাই চান লাল মিয়া।
ইউএনও-সিভিল সার্জনের ভাষ্য
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জোড়া শিশু দুটির চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, কিন্তু করোনার কারণে থমকে গেছে।
‘শিশু দুটির চিকিৎসায় কয়েক রকম চিকিৎসক প্রয়োজন। তারা বোর্ড বসাবেন। আমি আবারও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত অপারেশনে যাওয়া সম্ভব হয়।’
জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘শিশু দুটিকে আমি দেখেছি। তাদের চিকিৎসা ঢাকা মেডিক্যালে হওয়ায় কথা কিন্তু কোভিডের কারণে সব বন্ধ হয়ে আছে।
‘আর টাকা-পয়সার জন্য তাদের চিকিৎসা আটকাবে না। আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই শিশু দুটিকে আলাদা করা যাবে।’