রাজধানীর বনশ্রী বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আল-মামুনের মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আল মামুন বৃহস্পতিবার সারাদিন চেষ্টা করেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ পাননি। পরে এক প্রকার নিরূপায় হয়ে করোনা আক্রান্ত মাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বনশ্রীর বাসিন্দা আব্দুর রহমান রাসেল। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাঁচদিন পর গত রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। খোঁজ করতে শুরু করেন আইসিইউর। রাসেল শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স করে ৫টি সরকারটি হাসপাতাল ঘুরে আইসিইউ শয্যা খালি না পেয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। এই হাসপাতালে দিনে খরচ হয় এক লাখ টাকার বেশি।
এমন পরিস্থিতি এখন গোটা রাজধানীতে। যার চিত্র ফুটে উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যেও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা রাজধানীর ১৭টি সরকারি হাসপাতালে রয়েছে। এই সব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৮৫টি। তবে বর্তমানের মাত্র ১৭ শয্যা খালি রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজধানীর ২৯টি বেসরকার হাসপাতাল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। এসব হাসপাতালে ৫১৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে তার মধ্যে বর্তমানে খালি রয়েছে ৭৫টি। তবে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার খরচ অনেক বেশি বলে রোগীরা সাধারণত সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার খোঁজ করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে এখন বেশি গ্রামের রোগী। যাদের অবস্থা অনেক জটিল। এসব রোগী ভর্তির দুই দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি। ঈদের পর থেকে আইসিইউর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সময়ে নতুন রোগীর আইসিইউ পেতে আর একজন রোগী মৃত্যুর বা সুস্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
করোনা রোগী নিয়ে হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: নিউজবাংলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএনসিসি হাসপাতালে ২১২টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৬টি আইসিইউ শয্যা খালি থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে বর্তমানে কোনো আইসিইউ শয্যায় খালি নেই। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, কোরবানি ঈদের পর থেকেই কয়েকগুণ রোগী চাপ বাড়ছে। এসব রোগীর অধিকাংশের অবস্থা জটিল। তাদের বেশি রোগীকে আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন হচ্ছে। শুধু কোনো রোগী মারা গেলে অথবা কোনো রোগী সুস্থ হলেই আইসিইউ বেড খালি হয়। আইসিইউ সংকট নিরসনে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল দুই একদিনের মধ্যে ৫০০ শয্যায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে গুরুতর রোগীদের অক্সিজেন নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। একই সঙ্গে রোগী ও স্বজনদের অতিরিক্ত খরচ কমে আসবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবায় ২০টি আইসিইইউ শয্যা রয়েছে। যার একটিও বর্তমানে খালি নেই।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই। আইসিইউ সব সময়ই ফুলফিল থাকে। এই জায়গাটাতে আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক দিনের। আমাদের এখানে ২০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। কোনো শয্যা খালি নেই। সংকট নিরসরে নতুন ১৩টি আইসিইউ চালু করার চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই চালু করা হবে।’
করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যক্রমের পরিসর বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি এই সংস্থাটি বলছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান কর্মসূচির পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরে জোর দিচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, হাসপাতালে সীমাবদ্ধাতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সাধারণ ও আইসিইউ শয্যাসংখ্যা বাড়াতে তবে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ফাঁকা মাত্র ১৭টি
করোনা রোগীর সেবায় ঢাকার ১৭টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে তিন হাসপাতালে করোনা আইসিইউ শয্যা নেই। বাকি ১৪ হাসপাতালে মোট ৩৮৫ আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি আছে মাত্র ১৭টি। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ২টি, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ৩টি, ডিএনসিসি হাসপাতালে ৬টি, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে ৩টি শয্যা খালি রয়েছে।
এক নজরে শুক্রবারের করোনার চিত্র
২৪ ঘণ্টায় দেশের ৭০৭টি ল্যাবে করোনার ৪৮ হাজার ১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময়ে সুস্থ হয়েছে ১৫ হাজার ৪৯৪ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৭জন। সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।