করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে চলছে বিপর্যয়। একের পর এক লকডাউনে বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। দিনের পর দিন ঘরবন্দি জীবনে থাকতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ।
করোনার এই সংকটে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে শিশুরাও। বিভিন্ন দেশে থেমে থেমে বন্ধ রাখা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এর মধ্যে বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ প্রায় দেড় বছর। শুধু স্কুল নয়, শিশুদের জন্য ঘরের বাইরে খেলাধুলা, বেড়াতে যাওয়া বলতে গেলে একেবারেই বন্ধ।
চার দেয়ালের মাঝে বন্দি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়ংকর অবনতি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চলমান মহামারি শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনেও তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ অবস্থায় নতুন করে আশঙ্কাজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে একটি গবেষণায়। দেখা গেছে, করোনার সময় ঘরে আটকে থাকা শিশুদের দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূরের বস্তু পরিষ্কার দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে তারা।
হংকংয়ের দ্য চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকং-এর একদল গবেষক দেড় বছরের বেশি সময় গবেষণা চালিয়ে এমন উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাদের নিবন্ধটি ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথমলজিতে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা গত বছর ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী ৭০৯ শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে অনেকের মধ্যেই হ্রস্বদৃষ্টি বা মায়োপিয়ার লক্ষণ দেখতে পান। এ ধরনের শিশুরা কাছের বস্তুকে ভালোভাবে দেখতে পেলেও দূরের বস্তু ছিল ঘোলাটে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় করোনার প্রথম বছরে শিশুদের মায়োপিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।
গবেষকরা বলছেন, মহামারির সময়ে শিশুদের জীবনযাপনে পরিবর্তন আসায় মায়োপিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তারা বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না। পাশাপাশি দিনভর ঘরের ভেতরে ডিজিটাল মাধ্যমে আসক্তি, আঁকাআঁকি, বই পড়ার মতো কাজ করায় ‘হ্রস্বদৃষ্টি’ তৈরি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মায়োপিয়ার ক্ষেত্রে জিনগত কারণের চেয়ে বেশি দায়ী ঘরের বাইরে না যাওয়া। ঘরের মধ্যে দীর্ঘদিন আটকে থাকলে মানুষের চোখ দূরের বস্তুকে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় অভিযোজন ক্ষমতা হারাতে থাকে।
হংকংয়ের গবেষকরা তাদের নিবন্ধে লিখেছেন, ‘মহামারির বিস্তার ঠেকাতে ঘরে থাকার বাধ্যবাধকতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মতো ব্যবস্থা চিরদিন থাকবে না, তবে এই সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তিসহ মানুষের জীবনযাপনে যে পরিবর্তন ঘটছে, তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সবার জীবনে, বিশেষ করে শিশুদের ওপর থাকবে।’
আধুনিক জীবনে বিভিন্ন দেশেই মায়োপিয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের ৯০ শতাংশের মতো মানুষ হ্রস্বদৃষ্টির সমস্যায় আক্রান্ত, এ কারণে দেশটিতে মায়োপিয়াকে মহামারি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে ২০২০ সালে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মায়োপিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত ওই গবেষণায় চীনে মায়োপিয়া বাড়ার কারণ হিসেবেও লকডাউনকে দায়ী করা হয়েছে।