গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মা শেখ সায়েরা খাতুনের নামে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে অনিয়মের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমানের পক্ষে এ রিট করেন আইনজীবী এম আনিসুজ্জামান।
রিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগনে রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান বিডি থাই কসমো লিমিটেডের নামে অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সেটি জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (অর্থ বিভাগ), স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (অর্থ), গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, দুদক চেয়ারম্যান এবং বিডি থাই কসমো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
রিটকারী আইনজীবী মো. আনিসুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মা শেখ সায়েরা খাতুনের নামে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে জিনিসপত্র ক্রয়ে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে। যেটি রূপপুরের বালিশকাণ্ডকেও হার মানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার এ সময়ে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অবস্থায় হাসপাতালে এত বড় দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে ১৫ জুলাই সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় রিট করেছি।’
রিটটির শুনানি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে হতে পারে বলেও জানান আইনজীবী মো. আনিসুজ্জামান।
১৩ জুলাই ‘হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগনের দুর্নীতি, বাথরুম লাইটের দাম ৩ হাজার ৮৪৩ টাকা’ শিরোনামে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপর বিভিন্ন পত্রিকায়ও সংবাদটি প্রকাশ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইটের দাম ধরেছে ৩ হাজার ৮৪৩ টাকা, যার বাজারদর ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা। ১৮ ওয়াট এলইডি সারফেস ডাউন লাইটের দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১ টাকা, যার সর্বোচ্চ বাজারদর ৭০০-৮০০ টাকা। এলইডি ওয়াল স্পট লাইটের দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৬ টাকা, যার বাজারদর ৩০০-৪০০ টাকা। এমন ২৪ ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডব্লিউডির তালিকাভুক্ত না হলেও রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো লিমিটেড’ এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাপে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের দাম বিডি থাই কসমো লিমিটেডের (কসমো লাইটিং) দেয়া দাম থেকে অনেক কম। বিডি থাই কসমো লিমিটেড ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইটের ৩ হাজার ৮৪৩ টাকার যে দাম ধরেছে, দরপত্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৭১৫ টাকা করে দিতে চাইলেও সেটি নেয়নি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।