মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে গেলে পুলিশই শাস্তি দিতে পারবে। এ জন্য পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। প্রয়োজনে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করার কথা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পর্যালোচনাসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে তারা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা রুখতে চলমান ‘শাটডাউন’ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়েছে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলমান বিধিনিষেধ চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে সঠিকভাবে এনফোর্স করতে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যারা মাস্ক পরবে না তাদের জরিমানা করতে পারে। এ জন্য অধ্যাদেশ লাগবে। আলোচনা হয়েছে, আমরা সেদিকেও যাব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী সাত দিনে কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ৭ আগস্ট থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে করোনার টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
‘গ্রামের বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। তাই টিকা কার্যক্রম গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের হাতে এখন সোয়া কোটি করোনার টিকা আছে।
তিনি বলেন, ‘এ মাসে আসবে আরও অন্তত এক কোটি টিকা। দেশে টিকা উৎপাদন অনেক দূর এগিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র পাওয়া গেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে। তবে সেটা কী উপায়ে তা পরে জানানোর কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১১ আগস্ট থেকে সারা দেশের দোকানপাট খুলে দেয়া হবে। সীমিত পরিসরে রোটেশন করে যানবাহন চলবে, খুলবে অফিস। ১১ আগস্টের পরে টিকা না নিয়ে কেউ মুভমেন্ট করলে শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
মোজাম্মেল বলেন, ‘কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছে কি না, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে চলে যাবে, কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না। দোকানপাট খোলার আগে ৭, ৮, ৯ আগস্ট তিন দিন সুযোগ রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন নিতে পারে সেই সুযোগ দিচ্ছি।’
বর্তমানে সংসদ অধিবেশন না থাকায় অধ্যাদেশ জারি করে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান মোজাম্মেল হক।
এর আগেও একবার পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার কথা বলেছিল সরকার। পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াই এমন বিচারিক ক্ষমতা দিলে ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কাও করেছিলেন অনেকে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকেই সরকার সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। মাস্ক না পরলে সরকারি সেবা দেয়া হবে না বলেও নীতি নেয়া হয়।
তবে সচেতনতার অভাব নিয়ে নানা আক্ষেপের মধ্যে মার্চ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়। আর এই পরিস্থিতিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেয়া হয় লকডাউন।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা আরও বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পর মাস্ক পরার প্রবণতা আগের চেয়ে বাড়লেও এখনও মাস্কহীন মানুষের অভাব নেই পথেঘাটে।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগ। আদেশ অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জরিমানাও করে।
সংক্রমণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মাস্ক না পরে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
অবশ্য গত বছরের ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঘোষণায় এই আইন সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে বলা জেলা প্রশাসক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।