করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। গত এক দিনে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৮৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হন ২৭৯ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন ৮ জন।
চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৮২ জনের দেহে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৬ জন ছিল গত মাসেই।
এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২ হাজার ২০০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯৭৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯৪০ জন ডেঙ্গু রোগী।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) জানিয়েছে ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর এই বিস্তার নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে সরকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র এডিস মশা নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন ভবনে অভিযান চালিয়ে এডিস বিস্তারের পরিবেশ থাকায় জরিমানা করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে চলছে প্রচারণা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় মশার মাধ্যমে। আর অন্য মশার সঙ্গে ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস মশার পার্থক্য আছে। মূলত এই মশার জন্ম হয় আবদ্ধ পরিবেশে। ফলে নাগরিকরা সচেতন না হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগে ব্যাপক প্রাণহানি ও লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যান।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারে আক্রান্ত হয় ১ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। শহরের মানুষ ঈদের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। ঢাকা শহরের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এখন লকডাউনের কারণে বন্ধ, এগুলো এডিস মশার প্রজননের বড় ক্ষেত্র।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে মশা নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে, এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে পারে।’
নির্দিষ্ট হচ্ছে হাসপাতাল
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিশ্চিতে কয়েকটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে নতুন সংকট তৈরি করেছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই হাসপাতালের বারান্দায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেকেই হাসপাতালে এসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সুনির্দিষ্ট হাসপাতাল ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিচ্ছি।’
সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে ডেঙ্গু চিকিৎসায় ‘ডেডিকেটেড’ করা হবে বলে জানা গেছে।