করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও কক্সবাজারে মারা যাওয়া ৭৫ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্ট ছিল বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন জেলায় মারা যাওয়া ২২২ রোগীর উপসর্গ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয়ের নেতৃত্বে ‘ভারবাল ওটোপসি অফ ডেথস অ্যামাং কনফার্মড কোভিড-১৯ কেইসেস’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও কক্সবাজারের ১৪ জন গবেষক।
গবেষক দল জানান, চট্টগ্রামের ৭৭, কুমিল্লার ৯৬ ও কক্সবাজারের ৪৯ রোগীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। তথ্য নেয়া ১৬৬ জন পুরুষ ও ৫৬ জন নারীর মধ্যে ৬৩ শতাংশ পঞ্চাশোর্ধ্ব ছিলেন।
জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট এবং হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় অনেকের মৃত্যু হয় বলে জানান তারা।
গবেষক দলের সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আবু সাইদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে ২২২ রোগীর তথ্য নিয়ে কাজটি করেছি, তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশেরই (১৮০ জন) জ্বর ছিল। শ্বাসকষ্টের জটিলতা ছিল ১৬৬ জনের (৭৫ শতাংশ)।
‘এ ছাড়া কাঁশি ৫৫ শতাংশের, উচ্চ রক্তচাপ ৩২.৪ শতাংশের এবং ডায়াবেটিক ছিল ৪৯ শতাংশের।’
তিনি জানান, অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা পান ৭৮ শতাংশ (১৭৩ জন) রোগী। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন দেয়া হয়। বাসায় চিকিৎসা নেয়ার কারণে ১৯.৪ শতাংশ (৪৩ জন) রোগী কোনো অক্সিজেন পাননি।
আবু সাইদ বলেন, ‘মৃতদের ৪৯ শতাংশ (১০৯ জন) এজিথ্রোমাইসিন এবং ৪৭.৩ শতাংশ (১০৫ জন) ইনজেক্টেবল এন্টিবায়োটিক পান। রক্ত পাতলা করার জন্য হেপারিন জাতীয় ওষুধ পেয়েছিলেন ৩০.৩ শতাংশ (৬৭ জন)।’
তিনি জানান, গবেষণাপত্রটি চলতি বছরের ২৫ জুন একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের জন্য নির্বাচিত হয়। ইন্টারেকটিভ প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (আইপিডিআই) আয়োজিত ওই অনলাইন সেমিনারে তাদের গবেষণাপত্রটি সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
গবেষণায় অংশ নেয়া চিকিৎসকরা হলেন চমেক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ জয়, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলালুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, চমেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এনশাদ একরাম উল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সহকারী অধ্যাপক রবিউল আলম, সহকারী অধ্যাপক. মির্জা নুরুল করিম।
আরও ছিলেন কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজাহান, চমেকের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মেরিনা আর্জুমান্ড, আইসিইউ বিভাগের ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান চৌধুরী, চমেকের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. গালিব বিন মোস্তফা, ডা. অর্পি দাশ ও ডা. অরিন্দম সিং পুলক।