এক দিনের সময় দিয়ে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা খোলার আদেশের পর শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরা নিয়ে যে হুলস্থুল হয়েছে, সেটি করোনার সংক্রমণ বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। ভবিষ্যতে এই ঘটনায় তারা সচেতন থাকবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আগের দিন সড়ক ও ফেরির চিত্র তুলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা অবশ্যই সংক্রমণ বাড়াবে, আমরা স্বীকার করি আর না করি। আমরা দেখেছি গতকাল ফেরিতে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা ঢাকাতে ফিরেছে। এটা সংক্রমণ বাড়াবে।’
রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
চলমান শাটডাউনে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধ থাকবে, সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও ৩০ জুলাই বিকেলে হঠাৎ করেই ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার ঘোষণা দেয় সরকার।
পরদিন শনিবার শ্রমিকদের ঢাকামুখী যাত্রার যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি তো বটেই, প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাদের প্রতি সরকার এবং শিল্পমালিকদের দায়িত্ববোধের বিষয়টিও।
দূরের শ্রমিকদের ঢাকায় ডেকে আনা হয়েছে, অথচ বন্ধ গণপরিবহন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাকে-ভ্যানে চেপে পণ্য হয়ে ফিরেছেন হাজারো শ্রমিক। একদল ফিরেছেন স্বল্প গতির যানবাহনে ভেঙে ভেঙে, কেউ কেউ ফিরেছেন হেঁটে। আর ফেরি পারাপারে যে চিত্র দেখা গেছে, তা করোনাকালে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক গাদাগাদি করে উঠেছেন ফেরিতে, আর এর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করছেন বহু জন।
বক্তব্য রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকক্লান্ত-শ্রান্ত শ্রমিকরা ঘর্মাক্ত হয়ে ঘরে ফেরার পর রাতে আদেশ আসে লঞ্চ চলবে রোববার দুপুর পর্যন্ত। এরও ঘণ্টা খানেক পর জানানো হয় চলবে বাসও।
কিন্তু ততক্ষণে আর্থিক ক্ষতি সয়ে, শারীরিক কষ্ট সয়ে শ্রমিকদের সিংহভাগ চলে এসেছেন কর্মস্থলে। যারা শিশুদের নিয়ে ফিরেছেন, তাদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়।
এই আদেশ আসার পর যা ধারণা করা হয়েছিল, রাতে তাই দেখা গেছে। বরিশাল থেকে লঞ্চ ছাড়েনি, বাসেও দেখা যায়নি ভিড়।
আবার প্রথমে নির্দেশ আসে যে বাস চলবে বেলা ১২টা পর্যন্ত। আর লঞ্চ চলবে দুপুর পর্যন্ত। তবে রোববার আবার আদেশ আসে, সারা দিনই আসতে পারবে শ্রমিকবাহী বাস।
গণপরিবহন খুলে না দিয়ে কারখানা চালুর ঘোষণা দেয়া আর দুর্ভোগের পর বাস, লঞ্চ খুলে দেয়ার বিষয়ে কিছু না বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকব আমরা।’
শাটডাউন বাড়ানোর পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
মন্ত্রী জানান, চলমান কঠোর বিধিনিষেধ তথা শাটডাউন ৫ আগস্টের পরেও বাড়ানোর পক্ষে তার মন্ত্রণালয়। বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থালবে। ঊর্ধ্বমুখী করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ অবশ্যই থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মধ্যে সরকার জীবন-জীবিকার ব্যালেন্স করতে হচ্ছে। সরকারের সব দিকে নজর রয়েছে। ব্যালেন্স সব সময় ঠিক রাখা যায় না। বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছিল। আবার তারা লকডাউন দিয়েছে। আমরা দেখলাম অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আমেরিকাতে মাস্ক পরা তুলে দিয়েছিল আবার মাস্ক পড়তে বলা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় রেস্টুরেন্টগুলো খুলে দেয়া হয়েছিল আবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন দুইশর বেশি লোক মৃত্যুবরণ করছে, ১০ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এই সংক্রমণ আমরা কমিয়ে আনতে চাই যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি তাহলে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় ইতিমধ্যে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসছে। দক্ষিণবঙ্গে এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। সিলেট, চিটাগাং, কুমিল্লা এসব এলাকা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সেবা দেয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব ততটুকু বাড়ানো হয়েছে হাসপাতালে। নতুন আর একটিও বেডেও জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়’।
নতুন করে হাসপাতাল তৈরি করা যায় কিনা আমরা জায়গা খোঁজা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন ভবন খুঁজেছি। কিন্তু ভবন পাওয়া গেলেও তো হবে না, সেখানে ডাক্তার দরকার স্বাস্থ্যকর্মী দরকার সেগুলো একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’