চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফার্মেসিগুলোতে দেখা দিয়েছে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের সংকট। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডাজনিত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের চাহিদা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ। করোনাকালীন এই সময়ে ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় এ-জাতীয় ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় দেখা দিয়েছে এ সংকট। তা ছাড়া অনেক মানুষ অপ্রয়োজনে আগে থেকেই এসব ওষুধ সংগ্রহে রাখার প্রবণতাকেও দায়ী করছেন তারা।
শুক্রবার শহরের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে এই চিত্র চোখে পড়ে। করোনার এই সময়ে ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন বলেন, ‘গত দুই দিন আমার দুই বছর বয়সী বাচ্চাটার জ্বর এসেছে। ডাক্তার বলেছে নাপা সিরাপ ওষুধ খাওয়াতে। কিন্তু শহরের অনেকগুলো ফার্মেসি ঘুরেও ওষুধ পাইনি।’
শহরের মমিনপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ রাসেল বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের জ্বর থাকায় ডাক্তারের পরামর্শমতো প্যারাসিটামল ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে এসেছি। কিন্তু নাপা, নাপা এক্সটেন্ড বা প্রথম সারির কোনো কোম্পানির প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ পেলাম না। এই মহামারির সময়ে ওষুধের সংকট হলে আমরা যাব কোথায়।’
শহরের কালীবাড়ি এলাকার জনতা ফার্মেসির গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘দোকানে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। কিন্তু ওষুধ নিতে আসা প্রায় প্রত্যেকেই প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ চাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ মাস নাপা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা রেটিট, নাপা ওয়ান, নাপা এক্সট্রা ওষুধের সরবরাহ নেই বললেই চলে। তা ছাড়া স্কয়ার গ্রুপের এইচ, এইচ প্লাস, এইচ পাওয়ার, এইচ এক্সআর ওষুধগুলোরও পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছি না।’
শহরের মাতৃপীঠ স্কুল মোড়ের মিলন ফার্মেসির মালিক আবুল কালাম খান মিলন বলেন, ‘গত ১৫ থেকে ২০ দিন ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ১০০ পিস চাহিদা থাকলে তারা দিচ্ছেন মাত্র ১০ পিস। তা ছাড়া সাধারণ মানুষ পরিচিত ওষুধ ছাড়া অন্য ওষুধ নিতে চান না।’
একই এলাকার গাজী ফার্মেসীর মালিক আব্দুল হাফেজ গাজী বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ মানুষের প্রয়োজন হয়। আর এই করোনাকালীন মানুষের ঘরে ঘরে জ্বর থাকায় চাহিদা বেশি। আবার অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিয়ে নিজেদের সংরক্ষণে রেখেছেন।’
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উল করিম জানান, হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ মজুত রয়েছে, কোনো সংকট নেই।
সিভিল সার্জন শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘চাঁদপুর জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত প্যারাসিটামলের মজুত রয়েছে। রোগীদের তাদের চাহিদামতো দেয়া হচ্ছে। তবে জেলার কোথাও নাপা নেই। চাহিদার তুলনায় তাদের উৎপাদন কম থাকায় এই সমস্যা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথায় যেকোনো কোম্পানির প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খেলেও একই কাজ করবে। তা ছাড়া ফার্মেসি থেকে অতিরিক্ত ওষুধ নিয়ে মজুত করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাছির উদ্দিন সরোয়ার বলেন, ‘ওষুধ সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি সংকট থাকে তবে ওষুধসংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে।’