গ্রামাঞ্চলের মানুষের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিশ্চিতে ৭ আগস্ট ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দিনে সাড়ে আট লাখ করে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়া পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
উপজেলা পর্যায়ে নতুন এ কর্মসূচির আওতায় শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। গ্রামের সাধারণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় পারদর্শী নয়। তাই ইচ্ছা থাকলেও শুধু নিবন্ধন করতে না পারার কারণে অনেকেই টিকা দিতে পারেনি। করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে সরকারের উদ্যোগটি সময়োচিত এবং যথাযথ বলছেন জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অনেক আগেই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। তবে যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা যথাযথভাবে বস্তবায়ন হলে সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সব পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে যখন যে এলাকায় শিডিউল থাকবে সেই এলাকার ১৮ ঊর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেয়া শেষ করে অন্য এলাকায় যাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্ধারিত বয়সের কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসলেই দেয়া হবে টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করলেও আমাদের এখনও সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব বিদ্যমান রয়েছে। সংক্রমণের লাগাম টানতে সরকারের উদ্যোগটি সময়োচিত এবং যথাযথ। অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কেন্দ্রেগুলো ব্যবহার করতে পারবে সরকার।’
গ্রামে গ্রামে টিকা কার্যক্রমণ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এ বিষয়ে নিউজবাংলা কথা বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগামী ৭ আগস্ট থেকে গ্রামে গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদে ১৮ বছরের উপরে সবাইকে টিকা দেয়া হবে। সারাদেশের এই বিষয়ে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এটি আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এসব প্রশিক্ষণ অনলাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার এক দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। ওখানে সংবাদ সম্মেলন বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।’
জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যে টিকা দেয়া হচ্ছে এটা নিয়ে বিশৃঙ্খলার কোনো শঙ্কা দেখছেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছুটা শঙ্কাতো রয়েই যায়। আমার এ বষিয়ে স্থানীয় সরকারের কাছে সহায়তা পেয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনলাইনে একটি মিটিং করবেন। এই বেঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র স্থানীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকবেন। কারণ জনপ্রতিনিধিরা এই কাজের সঙ্গে সংযুক্ত না থাকলে নানাবিধি সমস্যা দেখা দিতে পারে।’
মাসে এক কোটি টিকা কীভাবে দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা করে যাচ্ছি এটা পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হবে। এখন বর্তমানে আমাদের হাতে ডেড় কোটি টিকার রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে আর দুই কোটি আমার হাতে আসবে। এই টিকা দিয়েই গ্রামে গ্রামে টিকাদান কর্মসূচি সেইভাবে নির্ধারণ করা হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিমাসে এক কোটি টিকা দেয়ার। তা না হলে আমার সারাদেশকে টিকার আওতায় আনতে পারবো না।’
শাটডাউনের মধ্যে কী ভাবে দেশে কিভাবে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রামের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শাটডাউনের কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে হয় বাস্তবায়ন হয়েছে করোনা টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে শাটডাউনে টিকাদান কর্মসূচিতে কোনো প্রভাবে পড়বে না।’