করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২১২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২০ হাজার ৪৬৭ জনে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬২ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ লাখ ৪০ হাজার ১১৫ জন। আর এখন পর্যন্ত যত মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন, তাদের ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশের মধ্যে ভাইরাসটির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।
মৃত্যু ও আক্রান্তের এই সংখ্যা আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় বেশ কম। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রাণহানি ছিল ২৩৯ জনের। আর ওই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ১৫ হাজার ২৭১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪০ জনের।
আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৫২ হাজার ২৮২ জনের। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা কমলেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়েছে।
গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ১৩ হাজার ৯৭৫ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ জন। সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১১৯ জন, নারী ৯৩ জন। এর মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। এছাড়া বিশোর্ধ্ব ৫, ত্রিশোর্ধ্ব ১৫, চল্লিশোর্ধ্ব ২৫, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৪৮ ও ষাটোর্ধ্ব ৬৯ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৩২ জন, অশীতিপর ১১ ও নবতিপর ৬ জন রয়েছেন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রামে বিভাগ, ৫৩ জন। এ ছাড়া খুলনা ৩৬ জন, রাজশাহীতে ১৩, বরিশালে ১১, সিলেটে ১৭, রংপুরে ৯ ও ময়মনসিংহে ৯ জনের করে মৃত্যু হয়েছে।
দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি। তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দু্ইটাই কমে আসে। এক পর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়। সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি। প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা ৭ জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। জনগণের চলাচল রোধে সরকার এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয় আরও সাত দিন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শাটডাউন আটদিনের জন্য শিথিল করা হয়। এতে উদ্বেগ জানায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে ঈদের তৃতীয় দিন সকাল থেকেই আবার ১৪ দিনের শাটডাউনে যায় দেশ, যা শেষ হবে ৫ আগস্ট। দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় চলমান লকডাউন আরও বাড়ানোর সুপারিশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।