বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সবাইকে টিকা দিতে লাগবে দুই বছর

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ২২:৩০

দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার। সে অনুযায়ী প্রায় ১৩ কোটি লোককে টিকা দিতে হবে। প্রতি মাসে ১ কোটি লোককে টিকা দেয়ার লক্ষ্য যদি পূরণ করা সম্ভবও হয়, তবু ৮০ শতাংশ লোককে দুই ডোজ টিকা দিতে দুই বছর লেগে যাবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে টিকা কার্যক্রমকে। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সঙ্গে ৩ কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চুক্তি করে বাংলাদেশ। তবে পরবর্তীতে সেটির জোগান বন্ধ হয়ে যায়।

টানা তিন মাস টিকা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও জুলাই মাসেই বাংলাদেশের প্রায় ২১ কোটি টিকার জোগান নিশ্চিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমবার জানিয়েছেন, এ টিকা আগামী বছরের শুরুর মধ্যে হাতে পাওয়া যাবে।

দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সরকার থেকে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তবে কীভাবে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, সেটি এখন মুখ্য বিষয়। টিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বয়স ও নিবন্ধন বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নিউজবাংলা টিকার পরিমাণ ও সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে জানার চেষ্টা করেছে কীভাবে সবার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। এই পরিংখ্যান অনুযায়ী, ৮০ ভাগ মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটি। সরকার ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়ার নীতি নিয়েছে। সেই অনুযায়ী দেশে এখন মোট ভোটার যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের সংখ্যা ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ।

যদি প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে এই সংখ্যক মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ সম্পন্ন করতে ১১ মাস সময় লাগবে। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ডোজ দেয়ার পর দুই মাস বিরতিতে নিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। তাহলে ১৮ বছর বয়সের এই ৮০ ভাগ জনসংখ্যাকে পুরোপুরি টিকার আওতায় আনতে সময় লাগবে ২২ মাস বা প্রায় দুই বছর।

ঢাকায় ৪৮টিসহ সারা দেশে এখন এক হাজার কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে।

গত মার্চ-এপ্রিল মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার সময় মাসে প্রায় ৯০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হচ্ছিল। প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ লোককে এখন পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের। সেই লক্ষ্য নিয়ে ২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টের মধ্যে ২ কোটি টিকা দেশে আসবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে ১০ কোটি টিকা। জনসনের টিকা আসবে আগামী বছর শুরুর দিকে। সেটির পরিমাণ ৭ কোটি।

তিনি বলেন, এসব টিকা দ্রুত সময়ে প্রয়োগের জন্য প্রতি মাসে ১ কোটি করে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ পর্যন্ত দেশে টিকার মজুত রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও ২ কোটি টিকা দেশে আসবে। তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ২১ কোটি টিকার মজুত করতে পারবে সরকার। সেখানে থাকবে ৩ কোটি চীনের টিকা, ৭ কোটি কোভ্যাক্সের টিকা, ১ কোটি রাশিয়ার টিকা, ৩ কোটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ও ৭ কোটি জনসনের টিকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, প্রতি ১০০ জনে ৮০ জনকে টিকা দেয়া হবে। গ্রাম এলাকায় অনেক মানুষ নিবন্ধন জটিলতার কারণে টিকা নিতে পারেন না। তাদের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।

যারা নিবন্ধন করতে পারেন না, তাদের জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান সেব্রিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি টিকার কোনো সংকট হবে না। যে হারে টিকা আসছে, তাতে ৮০ ভাগ মানুষকেই টিকা নিশ্চিত করতে পারব। তবে এই মুহূর্তে ১৮ বছরের নিচে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র মো. রোবেদ আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেয়া হয়েছে। এটা ইতিমধ্যে আইসিটি বিভাগে দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। তবে স্কুলের টিকা দেয়ার বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে টিকা দেয়া শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনা হয়েছিল। কিন্তু এই টিকা দেয়া এখন বন্ধ আছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পর চালান বন্ধ করে দেয়। তাদের কাছ থেকে সহসাই টিকার সরবরাহ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এর বাইরে বাংলাদেশ ওই সময়ে উপহার হিসেবে ২০ লাখ, পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় উপহার হিসেবে আরও ১২ লাখ ডোজ টিকা পায়। আর ভারতের সেনাপ্রধান দেন ১ লাখ ডোজ।

চীনের ৩ কোটি টিকার মধ্যে দেশে এসেছে ৫৫ লাখ। কোভ্যাক্সের ৭ কোটি টিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত দেশে এসেছে ৫৬ লাখ। রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা এখনও হাতে পায়নি বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করা হবে। চীনের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনের কথা বলছে সরকার। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক তাদের ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্সের জন্য হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি পায়নি এখনও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারটি কোম্পানির টিকা পেয়েছি। এগুলো হলো মডার্না, ফাইজার, সিনোফার্ম ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এর মধ্যে শুধু ফাইজারের টিকা ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজ খুলে দিতে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের যে টিকা দেয়া যায়, তার জোগান বাড়াতে হবে। নতুন কোনো টিকা ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের দেয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয় কি না সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর