করোনার চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’-এ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৫০০ শয্যায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এটি সম্পন্ন হলে গুরুতর রোগীদের অক্সিজেন নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। একই সঙ্গে রোগী ও স্বজনদের অতিরিক্ত খরচ কমে আসবে।
সোমবার করোনা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিউজবাংলাকে এ কথা বলেন।
১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে ২১২টি আইসিইউ রয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ৫৩১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঈদের পর থেকে রোগীর চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভর্তি হয়েছিলেন ১৩৮ জন। এর মধ্যে গতকাল ৬০ জন রোগীকে ছাড়পত্র দিয়েছি।
‘এসব রোগীকে কীভাবে মানসম্মত সেবা দেয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিনই কিছু কিছু করে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। আমাদের এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন আওতা বাড়ানোর জন্য ২০ হাজার লিটারের একটি নতুন ‘বিআই ট্যাংক’ (মেডিক্যাল অক্সিজেন রাখার ধারক) স্থাপন করা হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এটি করা হলে অনেক রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনএ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আগেই সংগ্রহ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছু আইসিইউ উপকরণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বাড়ছে কি না জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, ঈদের পর থেকে রোগী বেশি আসছেন। সংক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অনেক বেশি রোগী এখন ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন। আমাদের এখানে ৬০ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরের।’
তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই টিকা নেননি। টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন শতকরা ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষ। এ রকম একজন মাত্র রোগী মারা গেছেন।
ব্রিগেডিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দেশে করোনা নিয়ে খুব একটা গবেষণা না থাকলেও আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, টিকা নিলে করোনা আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কমে। যদি কেউ আক্রান্ত হয়ও, সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে।’
আইসিইউর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল আইসিইউর খুবই সংকট দেখা দিয়েছিল। আমাদের এখানে আইসিইউতে ২০০টি শয্যা রয়েছে। কাল ২০৬ জন জটিল রোগী ছিলেন। বর্তমানে আইসিইউ রোগী রয়েছেন ১১৯ জন। তবে অনেক রোগী আইসিইউর জন্য তালিকায় রয়েছেন।’
ঈদের পরে ঢাকার বাইরের রোগীর চাপ বেড়েছে জানিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসির বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন, তার ৪০ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন।’
এমন মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আসলে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসছেন, তাদের অধিকাংশের জটিল অবস্থা। তাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে অনেক দূর থেকে ঢাকায় আসছেন। দীর্ঘ যাত্রায় রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠছে। পরে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি জানান, এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ইতিমধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের সামর্থ্য বাড়ানোর কাজ চলছে।