বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দ্রুত মারা যাচ্ছেন ঢাকার বাইরে থেকে আসা করোনা রোগীরা

  •    
  • ২৬ জুলাই, ২০২১ ২০:৩৫

ডিএনসিসির ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন এর ৪০ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে অনেক দূর থেকে ঢাকায় আসছেন। দীর্ঘ যাত্রায় রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠছে। পরে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরের রোগীর চাপ বাড়ছেই। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীদের ৪০ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন।

ঢাকার বাইরে থেকে যে করোনা রোগীরা আসছেন বেশির ভাগেরই তীব্র শ্বাসকষ্টসহ ও নানা উপসর্গ রয়েছে। অধিকাংশ রোগীর অবস্থা জটিল হওয়ায় প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ, যে কারণে বেড়েছে আইসিইউর চাহিদা। এদিকে ঈদের পর চাপ বেড়েছে করোনা নমুনা পরীক্ষার। অনেকের নমুনা পরীক্ষার পর ফল পেতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের পর করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। ঢাকার বাইরে অধিকাংশ রোগী জটিল অবস্থায় ঢাকায় আসছেন। এদের চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ডিএনসিসির হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি চাকরিজীবী ওমর ফারুক ভূঁইয়া শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় তার বোন সাবিনাকে চার দিন ধরে শমরিতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখেন। তবে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর খরচ বহন করতে না পেরে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসেন।

ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘দিনে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হচ্ছিল। চার দিনে সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এমন খরচ আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের দীর্ঘদিন বহন করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করে এখানে নিয়ে আসছি।’

ওই হাসপাতালটিতে প্রতিবেদকের অবস্থানের এক ঘণ্টার মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি এমন জটিল করোনা রোগী আসেন।

ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ৫৩১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল ভর্তি হন ১৩৮ জন। এদের মধ্যে ৬০ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতি রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপতালগুলোতে।

সোমবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর চাপ দেখা গেছে। বাবার তীব্র শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থাকায় তাকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার পর স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করাই। তবে গত চার দিনে অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কারণে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন আইসিইউতে নিতে হবে। তবে এখানে আইসিইউ খালি নেই।’

ঢাকা মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে করোনা সেবার জন্য ৭০৬ শয্যার মধ্যে বর্তমানে ৮টি শয্যা খালি রয়েছে। এই হাসপাতালে ২৪টি আইসিইউ আছে। বর্তমানে এর একটিও খালি নেই।

ঈদের পরে ঢাকার বাইরের রোগীর চাপ বেড়েছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন এর ৪০ শতাংশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছেন।’

দ্রুত মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আসলে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আসছেন তাদের অধিকাংশ জটিল অবস্থায় আসছেন। এদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে অনেক দূর থেকে ঢাকায় আসছেন। দীর্ঘ যাত্রায় রোগীর অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠছে। পরে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব রোগী আসছেন তাদের ওপরে পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ইতিমধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেবার মান বৃদ্ধিতে হাসপাতালের ক্যাপাসিটি উন্নতির কাজ চলছে। এরই মধ্যে কিছু কাজও এগিয়েছে।

‘গ্রামের হাসপাতালগুলোতে ওই সাপোর্টটা দিতে পারলে রোগী মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও কমে আসবে। ঢাকার বাইরে থেকে ‍রোগী আসলেও এত জটিল অবস্থায় আসতে হবে না। এই সময়টা আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।’

ঢাকায় সরকারি আইসিইউ খালি মাত্র ৪৮টি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে লকডাউন চলমান থাকলেও ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর দিকে দেশে আইসিইউ নিয়ে যেমন হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতির দিকে আবার যাচ্ছে দেশ। ঈদের পর রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউয়ের চাহিদা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় সরকারি আইসিইউ খালি রয়েছে মাত্র ৪৮টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজধানীর করোনা সেবার জন্য ১৬টি হাসপাতালে ডেডিকেটেড করেছে সরকার। এর মধ্যে তিন হাসপাতালে কোনো ধরনের আইসিইউ সুবিধা নেই। অর্থাৎ, ১৩টি হাসপাতালে বর্তমানে ৩৯৩টি আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি আইসিইউ খালি রয়েছে। এ ছাড়া দেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১ হাজার ৩২৩টি। বর্তমানে ২৩৮টি খালি রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ২৬ বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০ বেড, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ বেড আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বেডের সব বেডে রোগী ভর্তি। এসব হাসপাতালের একটিতেও সিট খালি নেই।

কেবল ঢাকা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৫টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ২টি, ১২০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ১২টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৫টি, সবচেয়ে বেশি ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে ২৩টি, সব মিলিয়ে ৪৮টি আইসিইউ এখনও খালি রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর