দেশে গণটিকা কর্মসূচি শুরুর দুই মাস পর টিকার সংকট দেখা দিলেও বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা আসতে থাকায় সেই সংকট এখন অনেকটা কেটে গেছে। ইতোমধ্যে সরকারের হাতে প্রায় ১ কোটি টিকা আছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও দুই কোটি টিকা দেশে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে এত টিকা সংরক্ষণ হবে কোথায়?
সংরক্ষণের ঝামেলা কমাতে টিকাদানের পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দিনে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া প্রয়োজন। এই পরিমাণ টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে হলে টিকাকেন্দ্র বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে দুই শিফটে টিকা দেয়া যেতে পারে। তাহলে একদিকে যেমন টিকা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে হবে না, অন্যদিকে টিকা দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজার ও মর্ডনার ৫৬ লাখ টিকা দেশে আসছে। ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। মডার্নার টিকা সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়।
এত কম তাপমাত্রায় টিকা সংরক্ষণের হিমাগার ঢাকার বাইরে খুব কম জায়গায় আছে। যে কারণে এসব টিকা রাখা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় ইপিআইয়ের স্টোরের ওয়াক-ইন কুলার রুমে।
ঢাকার বাইরে ১২টি সিটি করপোরেশনের ইপিআইয়ে এই টিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সিনোফার্মের টিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মার গাজীপুরের ওয়্যার হাউজে। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মা জেলা-উপজেলাতে টিকা নিয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও ২ কোটি টিকা আসছে। এই টিকা ঠিক সময়ে প্রয়োগের জন্য আমার নিজের মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছি। এইসব টিকা সংরক্ষণের সামর্থ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় ইপিআইয়ের স্টোরের রয়েছে। ফাইজারের টিকা ইতোমধ্যে প্রয়োগ শেষ হয়েছে। মডার্নার ২০ লাখ ডোজ টিকা স্টোরে রাখা হয়েছে। বাকি টিকা দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে ইপিআইয়ের স্টোরের সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে এসব টিকা দেয়া শেষ হয়ে যাবে। নতুন টিকা আবার এখানে সংরক্ষণ করা হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা করছে। টিকাগুলো এখন হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি ধারাবাহিকভাবে এই টিকা দেশে আসবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অধিকাংশ নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে এখন থেকে ১৮ বছরের ওপরে দেশের সব নাগরিককে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছরের ওপরে সব নাগরিক যেন রেজিস্ট্রেশন করতে পারে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৩ কোটি টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা আসা শুরু হওয়ায় টিকা সংরক্ষণের জন্য সরকার নতুন করে পরিকল্পনা করছে। নতুন ফ্রিজ কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যে টিকা আসছে, এটা সংরক্ষণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘টিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি বা সংরক্ষণ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। যেসব টিকা দেশে আসছে, আমরা ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি। যেহেতু অনেক টিকা আমাদের হাতে আসছে, সেই কারণে টিকাদান কর্মসূচিকে আমরা বেগবান করতে চাচ্ছি, যাতে করে আমাদের সংরক্ষণের জায়গাগুলো পরিপূর্ণ না হয়ে যায়।’
আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে এমন অনেক টিকা আসছে, যার তাপমাত্রা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যে টিকাগুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা একটু কষ্টকর, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা একটু তাড়াতাড়ি টিকা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’